বর্ষায় স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃষ্টি উপভোগ করছে এক নারী। ছবি: ফাইল ফটো/ স্টার

'সারা বছর ধরে বৃষ্টি হোক

শুধু না ভেজে যেন তোমার চোখ,

শ্রাবণে ভরে থাক ফাগুনটাই

তোমার প্রিয় ঋতু বর্ষা তাই।'

গানটির গীতিকার এবং সুরকারের মতো বৃষ্টি আকাঙ্ক্ষা করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে বর্ষাকালে প্রয়োজনে, কাজে-কর্মে ঘরের বাইরে যেতেই হয়। কিন্তু সাধারণ সময়ে যেসব পোশাকে অবলীলায় বাইরে যাওয়া যায় বর্ষাকালে তা সম্ভব হয়না। বর্ষাকালের পোশাক বাছাইয়ে তাই চাই বাড়তি সচেতনতা।

মন ভালো রাখতে এই ঋতুতে গাঢ় রঙের পোশাক পরা যেতে পারে। গাঢ় বেগুনী, নীল, কালো, ফরেস্ট গ্রিন, ম্যাজেন্টা, জলপাই, টিল, গাঢ় লাল, নেভি ব্লু, সি গ্রিন খুব ভাল লাগবে।

বর্ষায় যেহেতু রাস্তা ঘাটে পানি জমে, স্যাঁতস্যাঁতে ভাব হয়, তাই হালকা রঙের জামা পরলে অসাবধানতায় পানির ছিটেফোঁটা জামায় লাগতে পারে। নোংরা ও দাগ পরা থেকে বাঁচাতে কালো বা গাঢ় রঙের জামা পরাই উত্তম।

এই সময় বেশি লম্বা কামিজ, জামা না পরে একটু শর্ট টপস, ফতুয়া পরলে বেশি ভালো লাগবে। প্রতিদিনের গতানুগতিক লুকের জন্যে ঢোলা পালাজ্জো, স্কার্ট, প্রিন্ট বা চেকের ঢোলা শার্ট এবং প্যান্ট ভালো হবে। আরেকটু অভিনব লুক আনতে টিউনিক্স, কাফতান, শর্ট ড্রেস, লেডিস পাঞ্জাবি বাছাই করা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃষ্টি উপভোগ। ছবি: ফাইল ফটো/ স্টার

সুতি কিংবা সুতি পোশাকের মতোই ভারি বুননের এবং ভারী সুতার কাজের কাপড়ের পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজলে সুতি কাপড় শুকাতে দেরি হয়। বিশেষ করে মোটা তন্তু বা বুননের সুতির কাপড় শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগে। এছাড়া এসব ফেব্রিকসের কাপড় পরে বৃষ্টিতে ভিজলে তা শরীরের সঙ্গে সেঁটে গিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। শরীরের সঙ্গে পানির সংস্পর্শটাও রাখে বহুক্ষণ। ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনাও তাই বেশি থাকে। একই সঙ্গে সুতির পোশাক ভিজে গুমোট গন্ধ কিংবা দাগ হয়ে পোশাকটি নষ্ট হতে পারে।

বর্ষাকালে যেহেতু বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে। কাপড় তাড়াতাড়ি শুকাতে চায় না। বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় উপযোগী হাফ সিল্ক, উজ্জ্বল সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, আর্ট সিল্ক, সেমি-তসর সিল্ক বা কটন মিক্স সিল্ক। এসব পোশাক খুবই আরামদায়ক এবং দ্রুত শুকায়। এসব কাপড়ের শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি, টপ, সালোয়ার-কামিজ ও পাওয়া যায়।

বর্ষায় ঢিলেঢালা পোশাক পরা ভালো। এতে বৃষ্টিতে ভিজলেও কাপড় গায়ের সঙ্গে লেগে অস্বস্তি হবে না। আর বর্ষায় নিত্যব্যবহার্য কিছু জামা বানানো যেতে পারে ফ্রক স্টাইলে এবং কুঁচি রেখে।

কখনো কখনো দেখা যায় খুব ঢিলেঢালা পোশাক পরার সুযোগ থাকে না বা নির্দিষ্ট পোশাক পরেই কাজে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে বৃষ্টিতে প্রতিকূল অবস্থা এড়াতে গায়ে শর্ট কিংবা লং কোটি, ডাবল জর্জেট বা শিফন জর্জেটের শ্রাগ জড়িয়ে নিয়ে বের হওয়া যায়। জর্জেট ওজনে হালকা বলে পরে ব্যাগে রেখে দিলেও ওজন লাগবে না৷

শাড়ি পরে বের হতে হলে বর্ষার দিনগুলোতে পছন্দের শীর্ষে থাকতে পারে গাঢ় রঙের হাফসিল্ক, পাতলা সিল্ক, শিফন, জর্জেট বা মসলিনের শাড়ি। এতে শাড়ি ভিজে গেলেও তা সহজে শুকিয়ে যাবে এবং গায়ের সঙ্গে লেগে থাকবে না। চলাচলের সুবিধা হবে।

বর্ষায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য উজ্জ্বল ধরনের পোশাক বাছাই করতে হবে। কারণ এইসময় আবহাওয়ার কারণে স্বভাবতই চারিদিক অন্ধকার থাকে। তাই এমন পোশাক বাছাই করতে পারেন যাতে নিজেকে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত দেখায়।

বৃষ্টির সময় ডেনিম অনেক বেশি সুবিধাজনক। সব ঋতুতেই মানানসইও বটে। প্রয়োজনে গুটিয়ে নেওয়া যায়। কাদার দাগও তেমন বোঝা যায় না। ডেনিম টাফ মেটিরিয়াল হওয়ার কারণে সহজে নষ্টও হয় না। হালকা রঙের ফেডেড ডেনিম ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পছন্দে এগিয়ে।

বর্ষার পোশাকের রঙের স্থায়িত্বের দিকেও রাখতে হয় বিশেষ খেয়াল। বৃষ্টিতে ভিজে কাপড় থেকে রং উঠতে পারে। যা শুধু নিজের জন্যই বিপত্তির নয়, আশপাশের মানুষও বিরক্ত হতে পারে। কেননা রং লেগে যেতে পারে তার পোশাকেও। বর্ষায় পরার উপযোগী কি না আগেই যাচাই করে নিতে কাপড়ের এক কোণা একটু সাবান পানিতে, সুযোগ না থাকলে কোণাটা একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে পারেন। এরপর কয়েক মিনিট রেখে ঘষে হাত দিয়ে পরখ করা যায় রং উঠছে কি না। যদি রঙ ওঠে তাহলে পুরো জামা থেকেই রং উঠবে।

বর্ষার দিনে বাইরে বেরোনোর সময় কোন ধরনের পোশাকে স্বস্তি মিলবে তা নিয়ে বিড়ম্বনা কম বেশি সবারই। একটু বুঝে, বুদ্ধি করে পোশাক বাছাই করলে এই ঝামেলা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

CSA to be repealed within a week: Nahid Islam

About the election, Nahid said an election based on national consensus will be held after completing all necessary reforms.

3h ago