শিশুকে গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখাবেন যেভাবে

আলোচনা করেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুব আজাদ।
শিশুকে গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখানো
ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের যৌন হয়রানি বর্তমান সমাজে যেন ব্যাধির আকার নিয়েছে। প্রায়ই খবরের শিরোনামে চলে আসে এ ধরনের ঘটনা। শুধু কন্যা সন্তান নয়, পুত্র সন্তানও হতে পারে এই ধরনের নির্যাতনের শিকার। শিশুদের এই  হয়রানি প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সবাইকে। একইসঙ্গে শিশুকেও প্রথম থেকেই এই বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন।

আর এই দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে মা-বাবাকেই নিতে হবে। ছোট থেকেই গুড টাচ-ব্যাড টাচের পার্থক্য শিশুকে বুঝিয়ে দিন। শিক্ষাটা শুরু হওয়া চাই বাড়ি থেকেই।

গুড টাচ ও ব্যাড টাচের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুব আজাদ।

গুড টাচ ও ব্যাড টাচ কী

একটি শিশুকে সবাই আদর করবে-ভালোবাসবে, এটা খুব স্বাভাবিক। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে সেই ছোঁয়া যেন বিকৃত না হয়। ভালো স্পর্শ মানে যে স্পর্শে শিশু নিজেকে নিরাপদ ভাবে এবং ভালো বোধ করে। অপরপক্ষে খারাপ স্পর্শ সেটি যেটি প্রতিটি শিশুর জন্য ভীতিকর ও অস্বস্তিকর। যখন একটু বুঝতে শিখবে, তখনই সন্তানকে বুঝিয়ে দিন, তার শরীরের বিশেষ কিছু জায়গায় কেউ যেন তার বিনা অনুমতিতে স্পর্শ করতে না পারে। এটি প্রতিটি শিশুর জন্য খুব সাধারণ জ্ঞান হবে। শিশুদের ভালোভাবে খেয়াল করে বোঝা যাবে, আপনার শিশু সন্তান কার স্পর্শ পছন্দ করছে আর কারটা করছে না।

কত বছর বয়স থেকে শেখাবেন

ডা. মাহবুব আজাদ  বলেন, 'দুই বছর বয়স থেকে বাচ্চারা তাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে  ধারণা লাভ করে। প্রতিদিন একটু একটু করে খেলার ছলে প্রত্যেকটি অঙ্গ সম্পর্কে শিশুকে ধারণা দিতে হবে । ছবি এঁকে কোনটি হাত, পা, মাথা, চোখ এভাবেও শিখাতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে তাকে প্রাইভেট পার্টস চিহ্নিত করা শিখান। কাপড় বদলানো এবং গোসল করার সময়ও তাকে এই ব্যাপারে অবহিত করুন। দুই বছর বয়সের পর থেকে শিশুদের সামনে পোশাক বদলানো থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের পোশাক বদলানোর সময় অনুমতি নেওয়া যেতে পারে। এতে করে সে বুঝতে পারবে শরীর স্পর্শ করার জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন।

কীভাবে শেখাবেন

শিশুরা অনেক সময় বুঝতেও পারে না তাদের সঙ্গে কী ঘটছে। তবে এরপর বুঝতে শেখার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। কিন্তু ছোট থেকে যদি ধারণা থাকে তবে শিশু নিজেই সতর্ক হতে পারবে বলে জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আজাদ।

শিশুর মনে আস্থা আর ভরসার জায়গা তৈরি করতে হবে। তাদের প্রতিটি কথা যেন আপনার কাছে সে বলে। তাদের প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনে তার উত্তর দিন। এতে করে তার মনে বিশ্বাস জন্ম নেবে যে তার কথা কেউ শুনছে ও বিশ্বাস করছে।

গুড টাচ ও ব্যাড টাচ সম্পর্কে একবারে না বলে একটু একটু করে গল্প ছলে বুঝান। ইন্টারনেটে বিভিন্ন কনটেন্ট বা শিক্ষণীয় কার্টুন রয়েছে সেগুলো দেখাতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে ব্যাড টাচ সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়াই ভালো। গুরুগম্ভীর আলোচনা না করে সাবলীল ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। এতটা জটিল করে বলা যাবে না যেন তারা ঘাবড়ে যায়। শিশুর গ্রহণ করার ক্ষমতা ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে একটু একটু করে শেখান।

শিশু মাত্রই সরল। চিপস, চকলেট, খেলনা বা পছন্দের জিনিসের কথা বলে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া তাকে সহজ। তাকে বোঝান যে এমনটা করা উচিত নয়। অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু যে নিতে হয় না সে বুঝাতে হবে।

শিশুর বন্ধু হয়ে উঠুন।  শিশু কার সঙ্গে মিশছে সেটিও খেয়াল রাখার দায়িত্ব অভিভাবকের। ঘরের বা কাছের মানুষদের দিয়েই যৌন হয়রানি শিকার হয় শিশুরা বেশি। বাবা-মা হিসেবে আপনি হয়ে উঠুন তার সবচেয়ে আপনজন। যেন প্রতিটি কথা সে আপনাকে জানায়। ঘটনাস্থল থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে আসার এবং ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির সামনে একা যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলুন। শিশুকে বলুন, যে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে তাকে ভয় না পেতে এবং কোনো কারণে নিজেকে দোষারোপ না করতে। কারো ছোঁয়া খারাপ লাগলে প্রতিবাদ করতে শেখান।

অভিভাবক হিসেবে করণীয়

আদর দূর থেকেই ভালো। শিশুকে অতিরিক্ত গায়ে ধরে আদর করা যে আপনি অপছন্দ করছেন সেটি অতিথি ও আত্মীয়দের বুঝিয়ে দিন। আপনার শিশু যদি কাউকে অপছন্দ করে বা কারো কোলে যেতে না চায় তবে তাকে জোর করবেন না। ছেলে শিশু হলেও তাকে নজরে রাখুন। শিশুকে কারো কোলে দেওয়া এবং কোলে বসিয়ে আদর করতে দেওয়া থেকে বিরত রাখুন। নিজেরাও শিশুর অপছন্দের গুরুত্ব দিন।

শিশু ব্যাড টাচের শিকার হলে কী করণীয়

এই ধরনের যৌন হয়রানি শিশুদের কোমল মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। এই ট্রমা বয়ে বেড়াতে হয় সারাটি জীবন। এতে করে শিশু অমনোযোগী হয়ে উঠতে পারে, ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে পারে, এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে।  আপনি যদি বুঝতে পারেন শিশু  এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে তাহলে তাকে প্রচুর সময় দিন। তার মনের ভেতরের ভয়টাকে কাটান। কোনোভাবেই শিশুকে দোষারোপ করবেন না। প্রয়োজনে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করুন। দোষীকে কখনোই ছাড় দিবেন না। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নিন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago