ইলন মাস্ক কী যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন?

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। এখন আরেকটি দল নিয়ে বেশ হইচই পড়েছে। এটি ধনকুবের ইলন মাস্কের 'আমেরিকা পার্টি'।
শনিবার যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের পর রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন মাস্ক। তবে তার রাজনৈতিক দল কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবে?

'আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চাইছেন, আর আপনারা সেটা পাবেন', জুলাইয়ের শুরুতে এক্সে ঘোষণা দেন ইলন মাস্ক।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে 'আমেরিকা পার্টি' গঠনের ঘোষণা দেন ইলন মাস্ক।
মাস্ক বলেন, আমরা এক ধরণের একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বাস করছি, যা দুর্নীতি ও অপচয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করে তুলছে। আর যাই হোক, এটি গণতন্ত্র নয়। আজ আপনাদের (জনগণের) স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতেই 'আমেরিকা পার্টি' গঠন করা হচ্ছে।
ইলন মাস্কের আশা, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির বাইরে কার্যকর বিকল্প হিসেবে 'আমেরিকা পার্টি' গড়ে উঠবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
তিনি কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে সিনেটের দুই থেকে তিনটি আসন ও প্রতিনিধি পরিষদের ১০ গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
মাস্কের মতে, কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভোট ব্যবধান সামান্য।
অল্প কয়েকটি আসনে জিতলেই 'বিতর্কিত আইনগুলোতে' নির্ধারকের ভূমিকায় থাকার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে আমেরিকা পার্টি।
ইলন মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সফল হবে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে ভ্যালডোস্টা স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক বার্নার্ড টামাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন একটি দল কংগ্রেসে আসন জিতে সরকারে প্রভাব ফেলতে পারবে, এমন কোনো আভাস নেই।

তিনি আরও বলেন, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের বিপুল অর্থের পাশাপাশি রয়েছে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো, পেশাদার রাজনীতিবিদ, পরামর্শদাতা ও বিজ্ঞাপন সংস্থার শক্তি।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই 'আমেরিকা পার্টি'র ধারণা গড়ে উঠে। এটা মূলত মাস্ক-ট্রাম্পের বহুল আলোচিত বিরোধের পর প্রকাশ্যে আসে।
অধ্যাপক বার্নার্ডের মতে, রাগ ও প্রতিহিংসা থেকে যেসব ধারণার জন্ম হয়, সেগুলোর পেছনে স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা থাকে না। মাস্কের রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও কিছু দিক ভালোভাবে চিন্তা করে করা হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আমেরিকা পার্টি ডোমেইনটি আগে থেকেই অন্য একজনের নামে নিবন্ধিত ছিল। সেই ব্যক্তি এখন এটি ৬৯ লাখ ডলারে বিক্রি করতে চান।
আবার মাস্কের মালিকানাধীন এক্সেও (সাবেক টুইটার) আমেরিকা পার্টি নামে আগে থেকেই আইডি তৈরি করা ছিল। যার ফলে, নতুন করে 'আমেরিকা পার্টি এক্স' নামে হ্যান্ডেল চালু করতে হয়।
বার্নার্ডের বলেন, 'এখন পর্যন্ত মাস্কের দলের মূলনীতি বা আদর্শ, কোনোটিই স্পষ্ট নয়। শুধু বলা হয়েছে রিপাবলিকানদের সরকারি দেনা ও ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করা হবে।'
পাশাপাশি মাস্ক বলেছেন, তার দল কিছু বিতর্কিত আইনেরও বিরোধিতা করবে। তবে এ ধরণের আইন কোনগুলো, তা স্পষ্ট করেননি এই ধনকুবের।
মাস্ক যেভাবে চিন্তা করছেন, সেভাবে তৃতীয় কোনো দল যুক্তরাষ্ট্রে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে সামনে এনে প্রধান দুই দলকে চাপে রাখার ক্ষেত্রে এই দলগুলো প্রভাব রাখে।
বার্নার্ডের মতে, তৃতীয় দলের কাজ হলো 'বিঘ্ন' সৃষ্টি করা।

উদাহরণ হিসেবে তিনি উইসকনসিনের প্রগ্রেসিভ পার্টি ও মিনেসোটার ফার্মার-লেবার পার্টির কথা উল্লেখ করেন। এই দল দুইটি বেকারদের সহায়তা করা ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাফল্য অর্জন করেছিল।
রিপাবলিকান পার্টি ক্রমশ ডানপন্থা ও ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা)' নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এটা তৃতীয় পক্ষের জন্য একদম আদর্শ সুযোগ। তৃতীয় দল হিসেবে আপনার কাজ হলো তাদের (রিপাবলিকানদের) এই অবস্থানের জন্য সমালোচনা করা এবং তাদের মাঝামাঝি পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।
এভাবেই তৃতীয় পক্ষের দলগুলো সবসময় সফল হয়েছে। তবে তৃতীয় দল হিসেবে রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করার চেয়ে যেসব দল ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছে, তাদের সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, মানুষ তৃতীয় একটি রাজনৈতিক দল চায়। তবে সেটা কেমন হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মাস্ক নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত হবে কি না। ঐ জরিপে ৬৫ শতাংশ মানুষ 'হ্যাঁ' বললেও জুলাইয়ের শুরুতে অপর এক জরিপে দেখা গেছে ১৪ শতাংশ ভোটার পূর্ণ সমর্থন করবেন, আর ২৬ শতাংশ ভোটার 'আংশিকভাবে' সমর্থন করবেন।
বার্নার্ড টামাসের ব্যক্তিগত মত, 'আমেরিকা পার্টি'র সাফল্যের পেছনে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি। সাধারণ মানুষ তাকে খুব বেশি পছন্দ করে না।

গত সপ্তাহের এক জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মাস্ককে পছন্দ করেন না। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ৩২ শতাংশ তাকে পছন্দ করেন আর বাকিরা খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন।
ইলন মাস্ককে মানুষ প্রযুক্তি খাতের দিকপাল ও উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই ভূমিকা থেকে বের হয়ে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারি দপ্তর ডিওজিই'র প্রধান হিসেবে কাজ করতে যেয়ে নিন্দা কুড়িয়েছেন। এবার নিয়েছেন সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর উদ্যোগ।
তার এই নতুন উদ্যোগের শুরুতেই মাস্ক ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি 'তৃতীয় দল' পেতে যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কি এ ধরনের তৃতীয় দল চায়, যার লক্ষ্যগুলো এরকম এবং যার নেতৃত্বে মাস্কের মতো একজন মানুষ আছেন? এসব প্রশ্নের জবাব এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comments