টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১, এখনো নিখোঁজ ১৬০

গুয়াদালুপ নদীতে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ছবি: রয়টার্স
গুয়াদালুপ নদীতে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১ হয়েছে। এখনো নিখোঁজ আছেন ১৬০ জন মানুষ।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি ও সিএনএন।

এখনো নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বন্যার এক সপ্তাহ পর জরুরি পরিস্থিতিতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের সতর্ক করার জন্য যেসব প্রক্রিয়া চালু আছে, সেগুলো পর্যাপ্ত বা কার্যকর কী না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শুক্রবার ৪ জুলাইর আকস্মিক বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১২১।

টেক্সাসের কের কাউন্টিতে অন্তত ৯৬ ব্যক্তি মারা গেছেন। সেখানে সতর্কতামূলক সাইরেন বসানোর দাবিতে ব্যক্তি উদ্যোগে অনলাইন পিটিশন চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই পিটিশনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সই দিয়েছেন। 

টেক্সাসের বন্যাকবলিত এলাকার স্যাটেলাইট চিত্র। ছবি: এএফপি
টেক্সাসের বন্যাকবলিত এলাকার স্যাটেলাইট চিত্র। ছবি: এএফপি

এবিসি নিউজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ৪ জুলাই ভোর ৪টা বেজে ২২ মিনিটে কেরভিলের ইনগ্রাম এলাকা থেকে এক দমকলকর্মী কের কাউন্টি শেরিফের অফিসে কল করে শিগগির পার্শ্ববর্তী হান্ট এলাকার বাসিন্দাদের আকস্মিক বন্যার বিষয়ে সতর্ক করার অনুরোধ জানান।

এবিসি নিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেস্যাট ওই কলের অডিও রেকর্ডিং জোগাড় করেছে। তারা জানায়, জরুরি ফোনকলের পরও কের কাউন্টির কোডরেড সিস্টেমে প্রথম সতর্কবার্তা আসতে পুরো ৯০ মিনিট দেরি হয়েছে।

কোনো কোনো এলাকায় সকাল ১০টার পরও সতর্কবার্তা পৌঁছেনি। ততক্ষণে অসংখ্য মানুষ পানিতে ভেসে গেছে।

সাংবাদিকরা এসব গাফিলতির জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত চান। তারা জানতে চান, সম্প্রতি ট্র্যাম্প সরকার তহবিল কমানোয় এ অঞ্চলের সতর্কতা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে কী না এবং কেন এতজন মানুষ সময়মতো সতর্কবার্তা পেলেন না।

তবে এসব প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি কর্মকর্তারা।

কের কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লেইথা বলেন, 'আমরা ঘটনা-পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো চিহ্নিত করব। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে হবে।'

হিউস্টনের প্রতিনিধি ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর পল বেটেনকোর্ট জানান, তিনি আইন করে ওই অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় কাউন্টিগুলোতে সাইরেন বসাতে চান। 

জুলাইর মাঝামাঝি সময়ে আপার গুয়াদালুপ নদী কর্তৃপক্ষ একটি কেন্দ্রীয় বন্যা নজরদারি প্রক্রিয়া চালু করার উদ্দেশ্যে বৈঠক করবে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, কয়েকজন স্থানীয় নেতা বহু বছর ধরে ওই এলাকায় বন্যা সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে এসেছে।

এর আগে কের কাউন্টিতে কার্যকর বন্যা সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর একাধিক উদ্যোগ অর্থায়নের অভাবে ও স্থানীয়দের অভিযোগের কারণে বাতিল বা ব্যর্থ হয়েছে। কাউন্টি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালে এই উদ্যোগের জন্য নয় লাখ ৮০ হাজার ডলারের তহবিল চেয়েও পায়নি নদী কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।  

কেরভিলের কমিউনিটি সার্ভিসেস অফিসার সার্জেন্ট জনাথন ল্যাম্ব এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধারকাজে যোগ দেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তবে তিনি উল্লেখ করেন, আপাতত নতুন করে আর কোনো স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, (উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য) কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যের সরকার আমাদের প্রাথমিক চাহিদা পূরণে যা দরকার, তার সবই দিয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছেন, যা নজিরবিহীন।' 

বন্যার সময় কাউন্টি ও জরুরি সেবাদাতা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগে পুলিশের রেডিও কেন ব্যর্থ হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ল্যাম্ব। তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আপাতত আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।'

হঠাৎ বন্যায় গুয়াদালুপ নদীর পানিতে ভেসে যায় নদীতীরে সামার ক্যাম্পে থাকা শিশুসহ অন্যরা। ক্যাম্পের ১০ জন শিক্ষার্থী ও একজন প্রশিক্ষক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্যায় মৃত্যুর ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন

তিনি আজ শুক্রবার ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন।

এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে আসছেন ট্রাম্প-মেলানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স
এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে আসছেন ট্রাম্প-মেলানিয়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্রীয় প্রশাসন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

'এটা ভয়াবহ ঘটনা, খুবই ভয়ংকর। যারা এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য প্রার্থনা করি। টেক্সাসের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করি', যোগ করেন তিনি।

গত শুক্রবার টেক্সাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গুয়াদালুপ নদীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ে নদীর পানি ২৬ ফুট (৭.৯ মিটার) বেড়ে যায় এবং আশেপাশের সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago