ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর কিছু নেই: খামেনি

রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি
রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইউরেনিয়াম পরিশোধনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের 'নাক গলানোর' কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা ও ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ইরানের শীর্ষ নেতা।

এমন সময় তিনি এই মন্তব্য করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে দফায় দফায় পরমাণু চুক্তির আলোচনা চলছে।

তেহরানের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু বোমার অন্যতম উপকরণ ইউরেনিয়াম পরিশোধন অব্যাহত রাখতে চায়।

অপরদিকে, এ ধরনের পরিশোধন প্রক্রিয়া বন্ধের বিনিময়ে পশ্চিমের দেশগুলোর আরোপ করা অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যা বললেন আলি খামেনি

বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি
বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বর্তমান নেতা আলি খামেনি।

রুহুল্লাহ খোমেনির ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলি খামেনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের মুখ থেকে আসা প্রথম বাক্যটি হলো—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থাকা চলবে না এবং (আমাদেরকে) যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।'

'আমেরিকার এই অর্থহীন কথার প্রতি আমাদের জবাব স্পষ্ট: এ বিষয়ে আপনাদের কিছুই করার নেই,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ইরান (ইউরেনিয়াম) পরিশোধন করবে কী করবে না, সে বিষয়ে আপনারা কেন নাক গলাচ্ছেন? এ বিষয়টির সঙ্গে আপনাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু প্রস্তাব আমাদের দেশের আত্ম-নির্ভরশীলতার ধারণা ও "আমরাও পারি" চেতনার পরিপন্থি।'

খামেনি জানান, ইউরেনিয়াম পরিশোধন ইরানের জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। 'স্বাধীনতা মানে এটা নয় যে আমাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের দোসরদের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় থাকতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

খামেনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের চেতনার 'শতভাগ পরিপন্থি'। তেহরান তাদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের অনুমোদন চাইবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

'কিছু মানুষ ভাবে, বাস্তববাদিতা মানে আমেরিকার কাছে নতজানু হওয়া ও শোষণমূলক ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করা; কিন্তু তা বাস্তববাদিতা নয়।'

তেহরান-ওয়াশিংটনের পরমাণু আলোচনার সর্বশেষ

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। ছবি: এএফপি

গত সোমবার রয়টার্স জানায়, প্রায় এক দশক ধরে চলমান পরমাণু বিতর্কের মধ্যে ওয়াশিংটনের সর্বশেষ প্রস্তাব নাকচ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানায়, এই প্রস্তাব এমনকি আলোচনার টেবিলে ওঠানোর মতোও নয়। কারণ, এতে ইরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধন উদ্যোগের প্রতি নমনীয়তা দেখানো বা তেহরানের স্বার্থরক্ষার ইঙ্গিত নেই।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়। পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়টি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে খনিজসমৃদ্ধ দেশটি।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ তেহরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ট্রাম্প তেহরানের পরিশোধন উদ্যোগের বিরোধিতা করেন এবং বিষয়টি নিয়ে নমনীয় হতে চান না।

জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত তিন মাসে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে ইরান। তবে পরমাণু অস্ত্রের জন্য অন্তত ৯০ শতাংশ পরিশোধিত ইউরেনিয়াম প্রয়োজন।

অপরদিকে, শুধু জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম পেতে ৪৬ শতাংশ পরিশোধনই যথেষ্ট। অর্থাৎ, প্রয়োজনের তুলনায় চার শতাংশ বেশি পরিশোধিত ইউরেনিয়াম আছে তেহরানের হাতে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সির (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটির দাবি, এটি 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এতে কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি হয়েছে।'

Comments