গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে ‘অস্বস্তিতে’ রাশিয়া-ইইউ

ডোনাল্ড ট্রাম্প, গ্রিনল্যান্ড,
ট্রাম্পের প্রাইভেট জেটে গ্রিনল্যান্ড সফরে এসেছেন তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। ছবি: এএফপি।

গ্রিনল্যান্ড দখল করতে প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপও নেওয়া হবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্য নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, 'শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত সরানো উচিত না।' আর যুক্তরাষ্ট্র এভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করলে মস্কোও তার জবাবে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডেনমার্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির বার্বিন।

আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম রাশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। ডেনমার্কের অধীনস্থ এই দ্বীপ অঞ্চল ১৯৭৯ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। মাত্র ৫৭ হাজার জনসংখ্যার এই অঞ্চল বিরল খনিজে পরিপূর্ণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় আর্কটিক অঞ্চলে প্রবেশ করা সহজ হয়ে ওঠছে। সেখান থেকে সম্পদ আহরণ ও নতুন বাণিজ্যপথের সম্ভাবনা দেখছে বৈশ্বিক পরাশক্তিরা, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া।

তবে এমাসে ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাওয়া ট্রাম্প এই অঞ্চলটি পুরোপুরি দখলই করে নিতে চাইছেন। গ্রিনল্যান্ডের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও পানামা খাল দখল করে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহারেও পিছপা হবেন না।

ট্রাম্পের মন্তব্য ইউরোপে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইইউয়ের কায়া কাল্লাস আজ সাংবাদিকদের বলেন, 'গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অংশ। গ্রিনল্যান্ডের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান রাখতে হবে।'

এর আগে বুধবার ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্কটিকে মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে আলোচনায় পথ উন্মুক্ত আছে।

এদিকে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, 'শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত সরানো উচিত না। পূর্ব বা পশ্চিম, সকল দেশের জন্যই এই নীতি প্রযোজ্য।'

'আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পেরেছি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট, (এ ব্যাপারে) আমাদের সবার একসঙ্গে থাকতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

গ্রিনল্যান্ড ও আর্কটিক রাশিয়ার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ এক বিবৃতিতে বলেন, রাশিয়ার 'জাতীয় ও কৌশলগত স্বার্থের' জন্য আর্কটিক গুরুত্বপূর্ণ এবং এ অঞ্চলে 'শান্তি ও স্থিতিশীলতা' দেখতে চায় মস্কো।

ডেনমার্কে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির বার্বিন বৃহস্পতিবার টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে লিখেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি অন্যান্য দেশের স্বার্থের বিনিময়ে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করার চেষ্টা করে, তাহলে রাশিয়াও সে অনুযায়ী সামরিক পরিকল্পনা করবে।'

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে 'অতিমাত্রায় উদ্ভট' বলে অভিহিত করেছেন। এই পরিকল্পনা কাজে আসবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

Comments