৬৫০ আসনের মধ্যে ৪৩০টি জিততে পারে লেবার পার্টি: জরিপ
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। সব ধরনের জরিপ ও বিশ্লেষকদের মত বলছে, প্রায় দেড় যুগ পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে হটিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে লেবার পার্টি।
আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
২০১৯ সালে বরিস জনসন সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর এটাই যুক্তরাজ্যে প্রথম সাধারণ নির্বাচন। মে মাসে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নির্ধারিত সময়সীমার ছয় মাস আগেই এই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋষি সুনাকের এই 'বাজি' কাজে লাগেনি, বরং তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় এবং এর আগের দুই বছরের সব জনমত জরিপ বলছে শোচনীয় পরাজয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে তার দল।
যার ফলে, বিশ্লেষকদের মতে, ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের (৬১) আগমন মোটামুটি নিশ্চিত।
সর্বশেষ ২০০৫ সালে মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। তবে এবার যুক্তরাজ্য ও দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জিততে চলেছে লেবার পার্টি—এমনটাই পূর্বাভাষ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
তা সত্ত্বেও, স্টারমার ভোটারদের বাসায় বসে না থেকে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ রচিত হবে ব্যালটে। শুধু আপনাদের ভোটের মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব হবে।'
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় দেশজুড়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরু হয়।
গির্জা, কমিউনিটি সেন্টার ও স্কুলের মতো প্রথাগত কেন্দ্রের পাশাপাশি একটি পাব ও একটি জাহাজকেও ভোটকেন্দ্রে হিসেবে সাজানো হয়েছে।
রাত ১০টায় বুথ-ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে। সেখান থেকেই ভোটের মোটামুটি নিখুঁত একটি চিত্র পাওয়া যাবে।
রাতভর যুক্তরাজ্যের ৬৫০ আসনের আংশিক ও পূর্ণ ফল আসতে থাকবে। জয়ী দলকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৩২৬টি আসন পেতে হবে।
জরিপের ফল বলছে, কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের গোলযোগপূর্ণ শাসনামলের অবসান এখন সময়ের ব্যাপার । ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হতে পারে। এরকম ঘটলে তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি সাধারণ নির্বাচনের পর নিজের পদ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য সান, ফাইনানশিয়াল টাইমস, দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য সানডে টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ডেইলি মিরর ইতোমধ্যে লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকা প্রথাগতভাবে ডানপন্থী কনজারভেটিভ দলকে সমর্থন জানিয়ে আসলেও এবার ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থান নিয়েছে।
ইউগভ, ফোকালডাটা ও মোর ইন কমন নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত তিনটি বড় আকারের জরিপে বলা হয়েছে, লেবার পার্টি অন্তত ৪৩০ আসন পেতে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে দলটি সর্বোচ্চ ৪১৮টি আসন জিতেছিল।
কনজারভেটিভরা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ১২৭টি বা তার চেয়েও কম আসন পেতে পারে।
পূর্বাভাষ সঠিক হলে শুক্রবার ঋষি সুনাক রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
এরপর রাজার সঙ্গে দেখা করবেন স্টারমার এবং সেসময় চার্লস তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাবেন।
আমন্ত্রণ গ্রহণ করে স্টারমার ডাউনিং স্ট্রিটে তার নতুন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার আগে বক্তব্য রাখবেন।
সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ও প্রধান কৌঁসুলি স্টারমার ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার জন্য অপেক্ষা করছে ভঙ্গুর সরকারি সেবা কাঠামো ও স্থবির অর্থনীতিকে মেরামত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ।
Comments