ট্রাম্পের আংশিক দায়মুক্তিতে যে প্রভাব পড়তে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সোমবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ থেকে আংশিক দায়মুক্তি দিয়েছে। যার ফলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এসব মামলার চূড়ান্ত রায় প্রকাশের তেমন কোনো সম্ভাবনা থাকছে না।

আজ মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন ট্রাম্প। সে সময় থেকেই বিশ্লেষকরা বলছিলেন, আইনি ঝামেলায় ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা বিঘ্নিত হতে পারে। পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।

তবে গতকালের রায়ে ট্রাম্প সমর্থকদের এসব উদ্বেগ অনেকাংশেই কমেছে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা। তারা একে 'ট্রাম্পের জন্য বড় জয়' এবং 'তিনি যা চেয়েছেন, তাই পেয়েছেন' বলে অভিহিত করেছেন।

যার ফলে, নভেম্বরের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে বিচলিত করার মতো তেমন কোনো আইনি বাধা আর থাকছে না।

সংবিধানের আওতায় থেকে নেওয়া উদ্যোগ থেকে দায়মুক্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ও বাইডেন। ছবি: রয়টার্স/কোলাজ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ও বাইডেন। ছবি: রয়টার্স/কোলাজ

আদালত জানায়, প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন সময় ট্রাম্প মার্কিন সংবিধানের আওতায় থেকে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে তিনি দায়মুক্তি পাবেন।

তবে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি পাবেন না ট্রাম্প। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ নিউইয়র্কের একটি আদালতে প্রমাণ হয়েছে। আগামী ১১ জুলাই এই অভিযোগের সাজা ঘোষণা করা হবে।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।  যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই উদ্যোগ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ।

এ ছাড়াও, জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি না দিতে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই নির্দেশ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা ও সমালোচনা হলেও, সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, এটিও ট্রাম্পের সাংবিধানিক ক্ষমতার আওতায় ছিল।

এমন কি, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের দিকে যাত্রা করতে সমর্থকদের উসকে দেওয়ার ঘটনাও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ক্ষমতার মধ্যে পড়ে।

সব মিলিয়ে, এক রায়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ থেকে আংশিক দায়মুক্তি পেলেন ট্রাম্প।

এই সিদ্ধান্ত প্রায় নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিচার ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে শুরু হবে না। এই নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী, এবং তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্প যদি ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে তিনি ২০২০ নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার মুখে পড়তে পারেন। কিন্তু তিনি যদি জয়ী হন, তাহলে তিনি দেশের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিতে পারেন মামলা বাতিল করতে।

বিপজ্জনক নজির

মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি বাইডেন-ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি বাইডেন-ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

এ বিষয়টিকে 'বিপজ্জনক নজির' বলে অভিহিত করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, এই আংশিক দায়মুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।

আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টকে অপরাধের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূলনীতি হলো এ দেশে কোনো রাজা থাকবে না। আইনের চোখে সবাই সমান হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও নন।'

বাইডেন আরও বলেন, 'আগামী নভেম্বরের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মামলার ফলাফল জানার অধিকার রয়েছে। এখন, আজকের সিদ্ধান্তের কারণে, এটা না ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।'

গত সপ্তাহে প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প-বাইডেন। তাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাইডেন। এরপর গতকাল তিনি হোয়াইট হাউস থেকে প্রথম ট্রাম্পের বিষয়ে কথা বললেন।

এর আগে ৬ জানুয়ারির ঘটনা থেকে সুরক্ষা পেতে নিম্ন আদালতে আবেদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিম্ন আদালতের সেই আদেশ বাতিল হয়ে গেল। একই সঙ্গে মামলাটি আরও পর্যালোচনার জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।

সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কারণে এটা স্পষ্ট যে নভেম্বরের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটলে হামলাসংক্রান্ত মামলার তেমন অগ্রগতি হবে না। আর নির্বাচনে জিতে ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এ মামলায় বিচার বন্ধের চেষ্টা করতে পারেন, এমনকি নিজেকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

8h ago