সাধারণ রক্ত পরীক্ষাতেই ধরা পড়বে লিভার ক্যানসার: গবেষণা
সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব বলে একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে আইসিডিডিআর,বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। বিখ্যাত পিয়ার রিভিউড আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রটি নিয়ে আজ ঢাকায় সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এইচকেজি এপিথেরাপিউটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং কানাডার রয়্যাল সোসাইটির ফেলো প্রফেসর মোশে জিফ। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউর হেপাটোলজিস্ট প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব, আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ডা. ওয়াসিফ আলী খান। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ।
আলোচকরা জানান, লিভারের রোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারীদের মতো ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের লিভার ক্যানসার শনাক্ত করতে এই পরীক্ষাটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে রোগটি শনাক্ত করা গেলে অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।
তারা আরও জানান, লিভার ক্যানসারের ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। এর ফলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
গবেষণা সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫৫৪ জন অংশগ্রহণকারীকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষাটির মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল লিভার ক্যানসার রোগী, নন-লিভার ক্যানসার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে পরীক্ষাটিতে লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণে ৮৪.৫ শতাংশ সেন্সিটিভিটি ও ৯৫ শতাংশ স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে। এই গবেষণা ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য প্রফেসর ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আজকের সেমিনারটি লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য একটি মাইলফলক এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনন্য অগ্রগতিকে তুলে ধরেছে। আমরা সবাই এখানে লিভার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একত্রিত হয়েছি। বিশেষ ডিএনএ চিহ্নিতকারীর উপর ভিত্তি করে এই নতুন পরীক্ষা ঝুঁকিতে আছে এমন মানুষদের সাহায্য করার পাশাপাশি ক্যানসারের প্রভাব কমিয়ে আনবে বলে আমি আশা করছি।'
প্রফেসর মোশে জিফ বলেন, 'উন্নত এই পরীক্ষাটি ক্যানসার শনাক্তকরণে একটি নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করেছে। এটি ক্যানসার রোগ নির্ণয় এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাসহ প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যানসার শনাক্তকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।'
বিএসএমএমইউ থেকে এই গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, 'যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবুও লিভার ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের এই অগ্রগতি একটি বিরাট পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং সেই সঙ্গে এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের উপর রোগের প্রভাবকে অনেকাংশে কমিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।'
Comments