কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল

ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে করিডোরে, নেই ফ্যান-পর্যাপ্ত টয়লেট

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অনেক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত করিডোরে। ছবি: স্টার

হাসপাতাল জুড়ে উন্মুক্ত খোলা ড্রেন, সেখান থেকে ভেসে আসছে তীব্র দুর্গন্ধ। এরমধ্যেই স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন টিনশেড করিডোরে। এই প্রচণ্ড গরমেও তাদের মাথার ওপর নেই কোনো ফ্যান। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে না পর্যাপ্ত বিনামূল্যের ওষুধ। আছে টয়লেট সংকটও। লাইন ধরে টয়লেটে যেতে হচ্ছে ডায়রিয়া রোগীদের।

এ চিত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালটিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিশেষ করে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অবস্থা শোচনীয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রাম থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শাহিদা খাতুন।

তিনি বলেন, 'টিনশেড করিডোরসহ পুরো ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র দুটি টয়লেট। সেখানে যেতে হলে লাইন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চারদিকে ড্রেন থেকে আসা গন্ধ। ঠিক করে নিঃশ্বাসও নেওয়া যাচ্ছে না।'

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সবার হাতে হাতে হাতপাখা। প্রচণ্ড গরমেও করিডোরে ফ্যান না থাকায় খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের।

তীব্র গরমে হাসপাতালের টিনশেডের করিডোরে ফ্যান না থাকায় হাতপাখা দিয়ে রোগীদের বাতাস করছেন স্বজনেরা। ছবি: স্টার

স্বজনদের অভিযোগ, এই সরকারি হাসপাতালে রোগীদের স্যালাইনও বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে না।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে চিকিৎসার জন্য আসা ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মাজেদা বেগম বলেন, '২০ দিনের ভেতর আমরা কয়ডা স্যালাইন পাইছি। আর সব কিনতে হয়েছে।'

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন করিডোরে। ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'ডায়রিয়া রোগীর পক্ষে কি টয়লেটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব? চারদিকে দুর্গন্ধে রোগীর সঙ্গে থাকা আত্মীয়-স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।'

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। তারা আছেন অন্য একটি ওয়ার্ডে। সেখানেও ড্রেনের দুর্গন্ধে টেকা দায়।

আরিফুল ও তার মা বলেন, 'সামান্য বাতাস উঠলেই আমাদের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা যায় না দুর্গন্ধে।'

এসব অভিযোগ বিষয়ে অবগত দায়িত্বশীলরাও।

তারা বলছেন, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে নিয়মিত রোগী থাকেন ৯০০ থেকে ১ হাজার। এত রোগীর ভার বহন করার সক্ষমতা এই হাসপাতালের নেই। অদূরে ৬০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বর্হিবিভাগ চালু হয়েছে। সেখানে রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হলে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল স্বাভাবিক চিকিৎসায় ফিরতে পারবে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স রেখা বেগম বলেন, 'হাসপাতালে গত কয়েকদিন রোগীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। বুধবার রাতেও ৮৩ জন ডায়রিয়া রোগী ছিলেন। সকালে অনেকেই ছাড়া পাওয়ার পরও ছিলেন ৫৬ জন, যা স্বাভাবিক ডায়রিয়া রোগীর দ্বিগুণ।'

'দুই দিন ধরে কোনো ক্লিনার আসেননি। বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর আজকে একজনকে ধার করে দেওয়া হয়েছে। ছোট একটা করিডোরে ছড়ানো-ছেটানো অবস্থায় আছেন ডায়রিয়া রোগীরা। পাশ দিয়েই গেছে দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেন। এই পরিবেশে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন', যোগ করেন তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়গুলো আমরা দেখেছি এবং ব্যবস্থাও নিয়েছি। এখনও কিছু কাজ করতে হবে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ফ্যানের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।'

সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীই বড় কারণ বলে দাবি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের।

তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধান সমস্যাই অতিরিক্ত রোগী। ২৫০ বেডের বিপরীতে রোগী থাকেন ১ হাজার। ডায়রিয়া ওয়ার্ডও ওখানে ছিল না। এই ওয়ার্ড ভেতরেই ছিল। কিন্তু রোগীর চাপের কারণে এখন টিনশেডের নিচে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'

রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'যাদের প্রয়োজন তাদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।'

হাসপাতালের দুর্দশার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমাদেরও কাম্য না। আসলে অতিরিক্ত রোগীর কারণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চালু হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সেখানে ৬০০ বেডের ব্যবস্থা আছে। তখন জেনারেল হাসপাতালের পরিবেশ এমনিতেই সুন্দর হয়ে যাবে।'

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা চালু হলেও এখনও সেখানে ভর্তির সুযোগ চালু হয়নি।

সেটি কবে চালু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'খুব শিগগির চালু হওয়ার সুযোগ নেই। এখনও জনবল আসেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago