‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণেই নদী দূষণ’

দূষণ
গাজীপুরে জেলা নদী রক্ষা কমিটির বিশেষ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ছবি: স্টার

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই নদী, জলাশয় ও খাল দূষণ এবং দখলরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'দূষণ ও দখলকারীরা নদীকে খাল, খালকে ড্রেন আর ড্রেনকে কাভার্ড ড্রেন বানাচ্ছে। দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে শিল্প-কারখানার বর্জ্য নদী, জলাশয় ও খালে ফেলাই গাজীপুরে নদী দূষণের মূল কারণ। এখানে শিল্প-কারখানাগুলোর ইটিপি সবসময় সচল থাকে না। আমরা শিল্পায়নের বিপক্ষে নই। তবে শিল্প-কারখানার বর্জ্য দিয়ে কোনোভাবেই নদী দূষণ করা যাবে না।'

আজ সোমবার গাজীপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটি, পরিবেশ ও বন কমিটি এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণ কমিটির এক বিশেষ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

লবনদহ নদী সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বিশাল এই জলভূমি এখন বিষাক্ত জলধারা। এটি এখন গাজীপুরবাসীর জন্য ক্যান্সার। আর এই ক্যান্সারের জন্য দায়ী যারা নদীকে দূষণ করেছেন তারা। অনেক বছর ধরে নদী দূষণ করা হচ্ছে, কিন্তু কেন দূষণমুক্ত করা হচ্ছেনা তা আমার মাথায় আসে না। যাদের দূষণরোধে কাজ করতে হবে তারা কি ঘুমিয়ে আছে?'

'পরিবেশ অধিদপ্তর শক্তিশালী হলে এবং তারা ভালোভাবে কাজ করলে দূষণরোধ করা সম্ভব। যারা নদীদূষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে। তাদেরকে জেলে পাঠাতে হবে, তাদের নামে মামলা দিতে হবে,' তিনি যোগ করেন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না বলেই গাজীপুরের নদীগুলো দূষিত হচ্ছে। আমি ৩ বছর আগে এসে এখানকার যে অবস্থা দেখেছিলাম এখনো তাই দেখছি। এই ৩ বছরে নদী দূষণরোধে এখানকার প্রশাসন তেমন কোনো কাজই করেনি।'

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তাসহ জেলার সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, 'নদী দূষন ও দখলরোধ করতে না পারার জন্য জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য বিভাগের দায় আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জেলায় যারা নদীর দূষণ ও দখল করছেন তারা অনেক শক্তিশালী। আমরা চাইলেও অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না।তবে আমাদের যেটা করা যেতে পারি, তাদেরকে ডেকে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে এবং দূষণ ও দখলরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া বলা যেতে পারে।'

জেলা প্রশাসক বলেন, 'গাজীপুর দেশের সর্ববৃহৎ সিটি করপোরেশন। কিন্তু এখানে যে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হয়েছে তা কোন পরিকল্পনা ছাড়াই করা হয়েছে। গাজীপুর অপরিকল্পিত একটি নগরী।'

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'তাদের পয়ঃনিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য নিজস্ব জায়গা নেই।'

এসময় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগরবিদ মনিরুল ইসলাম বলেন, 'দূষণের জন্য আমাদের দায় আছে এটা আমরা স্বীকার করছি ।তবে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং খুব শিগগির সমস্যার সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।'

নদী দূষণের ভুক্তভোগী স্থানীয় উন্নয়নকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, 'দূষণের কারণে আমরা কৃষিকাজ ভালোভাবে করতে পারছি না। গাছপালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছি না। দূষণরোধে আমরা এখানে দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখি না।'

বিশেষ সভা শেষ দূষণ ও দখলের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।এ সময় তারা শ্রীপুরের মেঘনা নীট কম্পোজিট কারখানা পরিদর্শন করেন এবং তাদের ইটিপি বন্ধ থাকা অবস্থায় পান। তবে কারখানার পক্ষ থেকে ইটিপি চালু ছিল বলে দাবি করা হয়।

এসময় ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'যারা নদী দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত তাদের নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।আমি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে এই নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। দূষণ ও দখলকারীরা জাতির শত্রু। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচাতে হলে এদের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।'

এসময় নদী দূষণ করার জন্য শ্রীপুর পৌরসভার মেয়রকে সতর্ক করেন এবং দূষণ বন্ধ না করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে বলে জানান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।তবে সেসময় মেয়র আনিছুর রহমান সেখানে অনুপস্থিত ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: Commerce Adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

21m ago