লোহালিয়া নদীর মোহনায় বালু ফেলা বন্ধের নির্দেশ নদী রক্ষা কমিশনের

লোহালিয়া নদীর মোহনায় স্তূপ করে বালু ফেলার কারণে নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়েছে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী নদীবন্দর সংলগ্ন লোহালিয়া নদীর মোহনায় বালু ফেলা বন্ধ ও সেখানে রাখা বালু অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১০ অক্টোবর পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আসলাম তালুকদার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করেন।

ছবি: স্টার

নদী রক্ষা কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ পটুয়াখালীর ওই এলাকা পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

আসলাম তালুকদার তার আবেদনে উল্লেখ করেন, পটুয়াখালী-ঢাকা নৌ রুটের লোহালিয়া নদীর মোহনায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে নদীর ড্রেজিংকৃত বালু ফেলে প্রায় ৭-৮ ফুট উচ্চতায় নদীর মোহনায় প্রায় ১০ একর এলাকা ভরাট করা হয়েছে। স্তূপ করে রাখা হয়েছে বালু। এতে নদীটির গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে নদীর তীরবর্তী লোহালিয়া ইউনিয়নের ইদ্রাকপুর গ্রামের অর্ধশত বসতবাড়ি ও সহস্রাধিক একর কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও এলজিইডি নির্মিত পাকা গ্রামীণ সড়ক, মসজিদ, কয়েক হাজার গাছপালা ও কবরস্থান নদীতে হারিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী রাস্তাটি ১০ বছরে ৩ বার ভেঙেছে। নদীর মোহনায় বালু ফেলা বন্ধ ও স্তূপীকৃত বালু দ্রুত অপসারণ না করলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ভাঙ্গন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এ ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারিয়ে ৭টি পরিবার রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়েছে।

বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া সাফিয়া বেগম ও হারুন মাঝি দম্পতি জানান, আমাদের বসত বাড়ি ৩ বার ভেঙে গেছে নদীতে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সাড়ে ৩ একর জমির মালিক থাকলেও এখন কিছুই নেই।

ছবি: স্টার

সাফিয়া বেগম জানান, কোনো রকমে ঘর তুলে বেঁচে আছি। বর্ষাকালে জোয়ারের পানিতে এই ঘরটি তলিয়ে যায়।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকার আজিজ খান জানান, নদীতে বিলীন হয়ে গেছে আমার বসত ঘর আর আধা একর কৃষি জমি। বাপ দাদার কবর, গাছপালা, পুকুর কিছুই নেই আমার।

লোহালিয়া নদীর মোহনায় স্তূপ করে বালু ফেলার কারণে নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়েছে।

স্থানীয় নাসির খান বলেন, আমার বাড়িতে দেড়শ নারিকেল-সুপারি গাছ ছিল। ঘরবাড়ি, কৃষি জমিসব হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য জাহানারা বেগম জানান, এই এলাকাটি এমনিতেই লোহালিয়া নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙ্গন-কবলিত ছিল। নদীর মোহনায় বালু ফেলে স্তূপ করার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বসতবাড়ি কৃষি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। আশ্রয় হারাচ্ছে মানুষ।

অবিলম্বে নদীর মোহনার বালু ফেলা বন্ধ ও সেখানে স্তূপীকৃত বালু অপসারণ করে না করলে এই এলাকার আরও বসতবাড়িসহ কৃষি জমিও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা জানান, পটুয়াখালী-ঢাকা নৌ রুটের লোহালিয়া চ্যানেলটি সচল রাখার জন্য প্রতিবছর শীত মৌসুমে ড্রেজিং করতে হয়। আর এ ড্রেজিংয়ে উত্তোলিত বালু ফেলার কোনো জায়গা না পাওয়ার কারণে লোহালিয়া নদীর মোহনায় ফেলা হয়েছিল। এখন ড্রেজিং বন্ধ আছে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনাটি পেয়েছি। নদীর ওই মোহনায় বালু ফেলা বন্ধ আছে। তবে সেখানে স্তূপীকৃত বালু অপসারণে সময় লাগবে। এ নিয়ে কাজ করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh asks India to halt border push-ins, cites security concerns

The move follows reports that BSF pushed in around 300 people into Bangladesh between May 7 and May 9

1h ago