লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামে কৃষিজমিতে ১৩৫ ইটভাটা, উদাসীন প্রশাসন
দেশের উত্তরাঞ্চলের ২ জেলা লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, এই ২ জেলার ১৭৪টি ইটভাটার মধ্যে ১৩৫টিই পরিচালিত হচ্ছে অবৈধভাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের ভাষ্য, এসব ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমি ও নদীতীরের মাটি। এতে একদিকে আবাদি জমির পরিমাণ যেমন করছে, তেমনি ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করার পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও।
তাদের অভিযোগ, এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে বারবার অভিযোগ করেও তারা কোনো সমাধান পাননি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষিজমি, আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমিতে ইটভাটা করা যাবে না।
২ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের করা তালিকা অনুসারে, লালমনিরহাটে ৬৩টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ১৬টি ইটভাটা বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর কুড়িগ্রামের ১১১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধভাবে চলছে মাত্র ২১টি। এসব অবৈধ ইটভাটার প্রায় সবগুলোই নির্মিত কৃষিজমির ওপর।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ঘনশ্যাম গ্রামের কৃষক নিত্যানন্দ বর্মণ (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই এলাকার বেশিরভাগ জমি ৩ ফসলি। তাই এসব জমির ওপর নির্মিত ইটভাটার কারণে একদিকে ফসল উৎপাদন যেমন কমে আসছে, তেমনি ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় তৈরি দূষণের জন্য তারা বসতবাড়িতে লাগানো ফলের গাছ থেকেও আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না।
একই কথা জানিয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার জিরামপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।'
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হামিরবাজার এলাকার কৃষক বদিয়ার রহমানের (৬৮) ভাষ্য, এই গ্রামে কৃষিজমির ওপর আগে থেকেই কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। নতুন করে আরও একটি ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে।
বদিয়ার বলেন, 'এই ইটভাটাগুলোর কারণে গ্রামের শতাধিক কৃষক পরিবার অসহায় পড়েছে।'
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিমের বক্তব্য, জেলার ১১১টি ইটভাটার মধ্যে ৯০টিই পরিচালিত হচ্ছে অবৈধভাবে। এসব অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই অভিযান চলবে।'
তাহলে এতদিন পর্যন্ত কেন অভিযান চালানো হলো না?- এমন প্রশ্নের জবাবে সাইদুল আরিফ অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের লোকবল সঙ্কটের কারণ উল্লেখ করেন।
একই কারণ দেখিয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধ ইটভাটার তালিকা পেয়েছি। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
Comments