উত্তরে হেমন্তের শুরুতেই কড়া নাড়ছে শীত

হেমন্তের সকাল
হেমন্তের সকালে দিনাজপুর শহরে কাঞ্চন সেতুর চারপাশে কুয়াশার চাদর। ছবি: স্টার

বর্ষার প্রলম্বিত পর্যায় শরৎ বিদায় নিয়েছে। পেঁজা পেঁজা মেঘ ভেসে বেড়ানো ঝলমলে আকাশের গায়ে এসে লাগতে শুরু করেছে কুয়াশার মলিন স্পর্শ। শুরু হয়েছে হেমন্তকাল। দিন ছোট হয়ে আসছে। বেলা পড়ে আসতেই সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে দ্রুত। রোদের তেজ কমে এসেছে।

সাধারণত শহরাঞ্চলে হেমন্তের প্রকৃতি ঠিক আপন বৈশিষ্ট্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। তবে উত্তরের জেলাগুলোয় হেমন্ত ছাপিয়ে এখনই গাঢ় হতে শুরু করেছে শীতের আমেজ।

সাধারণত প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলে শীত খানিকটা আগেই নামে। বিশেষ করে হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীতের তীব্রতা থাকে সবচেয়ে বেশি। এবার তেঁতুলিয়াতেই গত ৫ দিনে দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরেই তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আছে।

হেমন্তের সকাল
দিনাজপুর সদরে ‘আগাম আলু’র খেত। ছবি: স্টার

নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশ 'পেঁচা' কবিতায় হিম হিম হেমন্তের এমনই এক ছবি এঁকেছিলেন। তিনি লেখেন, 'প্রথম ফসল গেছে ঘরে,-/হেমন্তের মাঠে–মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল;/অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে/হিম হয়ে আসে/বাঁশ–পাতা মরা ঘাস- আকাশের তারা! বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!'

এখন কেবল কার্তিকের শুরু। অগ্রহায়ণের ঢের বাকি। তবু কেউ চাইলে জীবনানন্দের কবিতার এই লাইনগুলো পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ উত্তরের অন্য জেলাগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়।

শীতের হাওয়ায় কাঁপন না লাগলেও এখন থেকেই জেলাগুলোয় রাতের তাপমাত্রা কমে আসছে। মধ্যরাতে হালকা ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। ভোরে হালকা কিংবা ভারি কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে চরাচর।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তোফাজ্জল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত কার্তিক মাস থেকে উত্তরের জেলাগুলোয় শীতের আমেজ অনুভূত হতে থাকে। এবার আশ্বিনের শেষ থেকেই শীত শীত ভাব টের পাওয়া যাচ্ছে।'

চলতি সপ্তাহেই আরেক দফা বৃষ্টির পূর্বাভাসের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও দ্রুত কমবে।'

তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদী থেকে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন রাতে ঠাণ্ডা পড়ে। এর রেশ সূর্য ওঠা পর্যন্ত থেকে যায়।'

হেমন্তের সকাল
দিনাজপুর সদরে পাঁচবাড়ি এলাকায় হেমন্তের সকাল। ছবি: স্টার

প্রতি বছর এই মৌসুমে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয় বলেও জানান স্থানীয়রা। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে ফ্যানের ব্যবহার কমেছে বলেও জানান তারা।

দিনাজপুর শহরের মালদহপট্টি এলাকার লেপ বিক্রেতা বিমল রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শীত ঘনিয়ে আসায় লেপ তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এ বছর তুলার দাম বাড়তি। লেপের দামও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

এ ছাড়া, উত্তরে অনেক জনপদের মাঠে মাঠে এখন ছড়িয়ে পড়েছে পাকা ধানের ম–ম গন্ধ। ধুম পড়েছে ধান কাটার। কৃষকের আঙিনা ভরে উঠছে নতুন ধানে। পাশাপাশি চলছে শীতকালীন সবজি আবাদের কাজ।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago