বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে গ্রাহকের
মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজানের আগে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর পড়বে।
গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য (শিল্পকারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাস) প্রতি ঘনমিটারেও ৭৫ পয়সা বাড়বে।
বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ও ক্যাপটিভ পাওয়ারের দাম ৩০ টাকা।
৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে সরকার মার্চের প্রথম সপ্তাহে পেট্রোলিয়ামের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া চালু করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১ মার্চ থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে এবং প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, খুব কম (২০০ ইউনিটের কম) বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, এমন প্রায় এক কোটি গ্রাহককে প্রতি ইউনিটে মাত্র ৩৪ পয়সা বেশি দিতে হবে। বাকিদের ৭০ পয়সা করে বেশি দিতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি ইউনিটের গড় মূল্য বর্তমানে ৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা এবং পাইকারি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪ পয়সা করা হবে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।
গতকাল নসরুল হামিদ বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে না, শুধু সমন্বয় করছে।
'আমরা জ্বালানির দামের সঙ্গে বিদ্যুতের দামের সমন্বয় করছি, যা অন্য প্রতিটি দেশ নিয়মিত করে... জ্বালানি খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই', বলেন তিনি।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ১২ টাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় গত বছর ভর্তুকির হার বেড়েছে।
'এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে বিদ্যুতের জন্য প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাসের জন্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।'
তিনি আরও বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাত থেকে ধীরে ধীরে ভর্তুকি তুলে নিতে মূল্য সমন্বয় করছে।
'আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে এ ধরনের সমন্বয় করা হবে।'
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মানুষ এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হিমশিম খাচ্ছে।
'সারা দেশকে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু অতিরিক্ত ধারণক্ষমতার মতো অনেক ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তারা।'
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সরকারের বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
'কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। ব্যবসায়ীরা এমনিতেই নানা অজুহাতে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়। এখন রমজানকে সামনে রেখে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতেও তারা দাম বাড়াতে পারে', বলেন তিনি।
ক্যাবের সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটি ভোক্তাদের প্রতি অন্যায্য। কারণ বিইআরসির গণশুনানি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষ এই জাতীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে।
বিইআরসি আইনে ২০২২ সালের একটি সংশোধনী এখন সরকারকে বিইআরসির সম্পৃক্ততা ছাড়াই 'বিশেষ পরিস্থিতিতে' জ্বালানির দাম নির্ধারণের অনুমতি দেয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ছে
নসরুল হামিদ বলেন, বাসাবাড়ি ও যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৭ শতাংশ ও ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য ১৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
পেট্রোলিয়ামের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, 'অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে আমরা ডায়নামিক প্রাইসিংয়ের দিকে এগোচ্ছি।'
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
Comments