সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানির দাম সমন্বয় এখনো অনিশ্চিত

ফাইল ফটো রয়টার্স

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানির দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয়ের যে পরিকল্পনা ছিল, তা আরও পরে শুরু হতে পারে।

ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং পদ্ধতিতে স্থানীয় বাজারে জ্বালানির দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দিয়েছিল, তার একটি ছিল এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি স্থাপন।

এ ছাড়া, অনেক অর্থনীতিবিদ দীর্ঘদিন যাবত এমন একটি স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করে আসছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত জুনে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, জ্বালানিখাতে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ চলছে।

সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জুলাইয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি ফর্মুলা জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।

বিপিসি কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকে তাদের সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন, যেখানে বিপিসির জন্য ১০ শতাংশ লাভ ধরে দাম নির্ধারণের প্রস্তাব হয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক  কর্মকর্তা জানান, লাভ হিসেবে এত বড় মার্জিন মোটেও বাস্তবসম্মত নয়।

তবে বিপিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, বিপিসির উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য লাভের এই মার্জিন প্রয়োজন হবে।

খসড়া ফর্মুলা অনুযায়ী, বিপিসি সিঙ্গাপুরভিত্তিক এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক বাজার দর মূল্যায়ন করবে এবং সেই অনুযায়ী প্রতি ৩ মাসে স্থানীয় বাজারে জ্বালানির দাম সমন্বয় করবে।

বিপিসির এক কর্মকর্তার জানান, স্থানীয় দাম আন্তর্জাতিক দামের ৩ মাসের গড় অনুসারে নির্ধারণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, ৩ মাসের মধ্যে ডলারের গড় বিনিময় হারের পাশাপাশি প্রিমিয়াম, শিপিং খরচ, আমদানি শুল্ক, ব্যাংকিং ফি, অপারেশনাল লস, মজুত খরচ, বিক্রেতাদের লাভসহ সংশ্লিষ্ট খরচ যোগ করার পর স্থানীয় দাম নির্ধারণ হবে।

দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে যে একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করার পর জ্বালানির দাম নির্ধারণের এই ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং শুরু করেছে ভারত।

ভারতের কিছু রাজ্য প্রতিদিন এবং কিছু রাজ্য প্রতি মাসে জ্বালানির দাম সমন্বয় করে।

ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানান, কর্তৃপক্ষ এখনো প্রতি ৩ মাসে বা প্রতি মাসে দাম সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা করছে।

তার মতে, ৩ মাস পরপর সমন্বয় করা হলে সেটা অনেক সময় ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। প্রতি মাসে সমন্বয় করা হলে তা ভোক্তাদের জন্য তুলনামূলক সুবিধাজনক হবে এবং মূল্যস্ফীতি কমাবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গত রোববার ডেইলি স্টারকে জানান, সরকার ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং নির্ধারণের ফর্মুলা ঘোষণা করার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৩ মাসে দাম অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছে সরকার।'

যোগাযোগ করা হলে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানান, ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইস নির্ধারণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, 'কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। যদি মন্ত্রণালয় আমাদের বলে যে আজ থেকেই এই পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ হবে, তাহলে আমরা আজ থেকেই চালু করব। কিন্তু, সরকারকে এই ধরনের উদ্যোগের সার্বিক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবতে হবে।'

জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে লাভের যে মার্জিন বিপিসি প্রস্তাব করেছে যে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিপিসি লিখিতভাবে লাভের পরিমাণ সম্পর্কে কোনো প্রস্তাব দেয়নি।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মোহাম্মদ জাকীর হোসেন দাম নির্ধারণের এই ফর্মুলা নিয়ে কাজ করা একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানিয়েছেন যে বিষয়টি 'প্রায় চূড়ান্ত' হয়ে গেছে।

সেপ্টেম্বর থেকে এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তেমনটাই আশা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Family reunited after 18 years

Stranded in Malaysia, man finally comes back home

23m ago