বড় ভূমিকম্পের ছোট প্রস্তুতি

ঘন ঘন ভূ-কম্পনের অর্থ হতে পারে একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পূর্ব লক্ষণ। তবে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা নগরী এই ধরনের বড় দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে কম প্রস্তুত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল সকালের ৫ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ভবন থেকে বাইরে বেরোতে গিয়ে কুমিল্লায় অন্তত ৭৬ পোশাকশ্রমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহত হন।

শহরটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকার কাছাকাছি প্রায়শই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। তবে প্রস্তুতির অভাবে বড় ভূমিকম্প ব্যাপক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর প্রায় ১০০টি ভূমিকম্প বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে যার বেশিরভাগই ৩ দশমিক ০ থেকে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ছোটখাট ঝাঁকুনি। তবে এর মধ্যে পাঁচটি ছিল ৫ মাত্রার বা তার বেশি।

এর মধ্যে আটটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশে। ইউএসজিএস জানায় গতকালের ভূমিকম্প যা বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ, সেটি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাছে ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে।

অবস্থানটি ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিএমডি সিসমিক সেন্টার থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, 'এগুলো খুবই উদ্বেগের বিষয়'।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসলে সাবডাকশন জোনে বসে আছে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে প্লেটগুলোতে যে শক্তি জমে আছে তাতে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হতে পারে। এবং এ শক্তি যে কোনো সময় নির্গত হতে পারে। ফল্ট লাইন বরাবর সাম্প্রতিক সমস্ত কম্পন তারই ইঙ্গিত।

তিনি বলেন, একটি বড়মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় অনিবার্য। সরকারকে স্বল্পমেয়াদী প্রস্তুতিমূলক প্রোগ্রামগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যা মানুষকে ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় এবং ভূমিকম্পের সময় যতটা কম ক্ষতি হয় সেটি শেখাতে পারবে।

'সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সঠিক প্রস্তুতিতে অনেক সময় লাগে। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রয়োজন।'

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ১৮৬৯ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। কম্পনটি কাছাড় ভূমিকম্প নামে পরিচিত। যেটা হয়েছিল ফল্ট লাইনের কাছাকাছি।

এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে এবং কাছাড়ের ভূমিকম্পের পরে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সে কারণেই একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প খুব বেশি দূরে নাও হতে পারে বরে মনে করেন তিনি।

তার মতে, গতকালের ভূমিকম্প আরও শক্তিশালী হলে তা বিপর্যয়কর হতে পারত। এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বেশি দরকার ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন।

যোগাযোগ করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে একটি ভূমিকম্প সহনশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।

'আমরা একটি জাতীয় বিল্ডিং কোড তৈরি করেছি। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সব নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এটি ভূমিকম্পের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা হ্রাস করবে,' তিনি বলেন।

জনসচেতনতার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তবে তিনি সচেতনতার গুরুত্বকে অগ্রাহ্য করে বলেন, 'মনে রাখবেন, সচেতনতামূলক কর্মসূচি ক্ষতি কমায় না।'

আহত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি কারখানা ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে অন্তত ৭৬ পোশাক শ্রমিক আহত হয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ওই সময় কারখানার কলাপসিবল গেটে তালা ছিল।

অন্যদিকে ভূমিকম্পের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

9h ago