'সব সময় চেয়েছি কম, পেয়েছি বেশি'
আবুল হায়াত একজন পরিপূর্ণ অভিনয়শিল্পী। টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র, মঞ্চ, বেতার নাটকে সুদীর্ঘ ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয় করছেন। অসম্ভব খ্যাতি অর্জন করেছেন একজীবনে। পেয়েছেন কোটি দর্শকের ভালোবাসা। আজও অভিনয়ে সরব গুণী এই অভিনেতা ।
নাটক পরিচালনা করেও দর্শকদের মন জয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি অসংখ্য নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। লেখালেখিও করেন নিয়মিত।
একুশে পদক প্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াতের জন্মদিন আজ ৭ সেপ্টেম্বর। আজ ৮০ বছরে পদার্পণ করলেন তিনি।
জন্মদিন সম্পর্কে আবুল হায়াত বলেন, 'মানুষের ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হই। বিশেষ দিনে আরও বেশি ভালো লাগে। যে জীবন আমি কাটিয়েছি, সে জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত। আমার কোনো আফসোস নেই। নিজেকে সবসময় সুখী মানুষ মনে করি।'
'আমার বাবা সবসময় বলতেন, চাইবা কম পাইবা বেশি। এজন্য সব সময় আমি কম চেয়েছি, কিন্ত বেশি পেয়েছি। যার জন্য কখনো হতাশা আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। আল্লাহর রহমতে আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে, পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে অনেক ভালো আছি। সুখে আছি', যোগ করেন তিনি।
আবুল হায়াত বলেন, 'এখন আমি বলতে পারি ৮০ বছরে পা দিলাম। আমি আপ্লুত মানুষের ভালোবাসায়।'
হুমায়ুন আহমেদের অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আবুল হায়াত। নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও কম জনপ্রিয় নন তিনি। তার অভিনীত সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে রয়েছে অয়োময়, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, এইসব দিনরাত্রি ও নক্ষত্রের রাত।
আশির দশকে বহুব্রীহি নাটকে তার অভিনয়ের জাদু দেখেছেন এদেশের দর্শকরা। অয়োময় নাটকে তার অভিনীত চরিত্রের প্রশংসা হয় আজও। এমনি করে প্রতিটি নাটকে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল প্রশংসনীয়। আজও নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি।
হুমায়ুন আহমেদের নাটকে কখনো তিনি রাগী বাবা, কখনো আদর্শ শিক্ষক, কখনো জমিদার, কখনো সাদামাটা একজন মানুষের চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন। চরিত্রে যেটাই হোক না কেন, সুনিপুণ অভিনয় শৈলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর ভাবে। দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বারবার।
হুমায়ুন আহমেদের লেখা প্রথম নাটক 'দ্বিতীয় প্রহর' এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। এই লেখকের নিমফুল তার অভিনীত আরেকটি আলোচিত নাটক।
বিটিভির স্বর্ণালি দিনের সাড়া জাগানো নাটকে উপস্থিতি তার শিল্পী জীবনকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি টেলিভিশন নাটককেও সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। অসংখ্য নাটকের দর্শকদের কাছে তিনি একজন আদর্শ বাবা। একাধিক নাটকে বাবার চরিত্রে অভিনয় করে এই খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রেও কম অভিনয় করেননি। সর্বশেষ হৃদি হক পরিচালিত '১৯৭১ সেই সব দিন' সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২ বছর আগে তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় ফাগুণ হাওয়ায় সিনেমায় অভিনয় করেন। একই পরিচালকের মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র জয়যাত্রা তেও অভিনয় করেন বেশ কয়েক বছর আগে। হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'আগুণের পরশমনি' তে আবুল হায়াতের অভিনয় কাঁদিয়েছে অনেক দর্শককে।
এভাবেই একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সুভাষ দও পরিচালিত 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী' সিনেমায় অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে। ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। কাজী জহিরের বধূ বিদায়, বেবী ইসলামের চরিত্রহীন, আয়াত আলী পাটোয়ারীর সূর্য সন্তান, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা সহ অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
অভিনয় জীবনের শুরুটা করেছিলেন মঞ্চ নাটক দিয়ে। দেশের সেরা নাটকের দল নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের অন্যতম একজন তিনি। টানা কয়েক দশক তিনি মঞ্চে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ মঞ্চে অভিনয় করেছেন দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটকে ।
গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত সম্পর্কে তারিক আনাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবুল হায়াত একজন পরিপূর্ণ অভিনয়শিল্পী। তার গুণের শেষ নেই। এমন শিল্পী কমই আছেন। তার ব্যবহারও সুন্দর। অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। হায়াত ভাইয়ের জন্য মন ভরে আশীর্বাদ করছি।'
মামুনুর রশীদ বলেন, 'একজন শিল্পী দশকের পর দশক কেবল অভিনয় করে কাটিয়ে দিলেন । এটা ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি হয় । আমাদের পরিচয়, শিল্পের সংগে পথচলা বহুকালের । তার সুন্দর জীবনযাপন, দায়বদ্ধতা এবং শিল্পীজীবন আমাদেরও মুগ্ধ করে। জন্মদিনে ভালোবাসা।'
ডলি জহুর বলেন, 'হায়াত ভাই একজন আপাদমস্তক শিল্পী। তার তুলনা তিনি নিজেই। অসাধারণ ভালো অভিনেতা এবং ভালো একজন মানুষ তিনি। তার জন্য সবসময় দোয়া করি।'
Comments