এখনো অভিনয়ে সরব সিনিয়র শিল্পীরা

(বাম থেকে) আবুল হায়াত, দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, ডোলি জহুর, আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সংগৃহীত

কেউ অভিনয় করছেন পাঁচ দশক ধরে, কেউ ছয় দশক ধরে। বয়স তাদের অভিনয় থেকে দূরে সরাতে পারেনি।

জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন অভিনয় করে। এখনো অভিনয়ে সরব তারা। কেউ কেউ অবশ্য প্রতি মাসেই শুটিং করছেন।

জানা যাক কোন কোন সিনিয়র অভিনয়শিল্পী এখনো অভিনয়ে সরব আছেন।

ফেরদৌসী মজুমদার

এ দেশের অন্যতম খ্যাতিমান অভিনেত্রী তিনি। অভিনয় করে হয়েছেন দর্শকনন্দিত। সংশপ্তক নাটকে হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া জাগানো গুণী এই অভিনেত্রী পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। জীবনের সেরা সময় পার করেছেন মঞ্চে। এখনো মঞ্চে সরব তিনি। টিভি নাটকে ও সিনেমায় অভিনয় করেন কদাচিৎ। মঞ্চে তার আলোচিত  একক নাটক কোকিলারা।

ফেরদৌসী মজুমদার সবশেষ অভিনয় করেছেন ফ্রম বাংলাদেশ নামের একটি সিনেমায়। এটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। মেঘলা আকাশ তার অভিনীত আলোচিত সিনেমা। এছাড়াও বরফ গলা নদী, শঙ্খনীল কারাগারসহ অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

মামুনুর রশীদ

মঞ্চ-টেলিভিশন-সিনেমা ৩ মাধ্যমেই সরব মামুনুর রশীদ। গত ৫ দশক ধরে হাঁটছেন অভিনয়ের পথে। কখনো বিরতি নেননি। শুধু অভিনয় নয়, নাট্যকার হিসেবেও সমানভাবে সমাদৃত। পরিচালক হিসেবেও সফলতা পেয়েছেন বেশ আগেই।

সবশেষ তিনি মঞ্চে অভিনয় ও পরিচালনা করেছেন রাঢ়াঙ। একুশে পদক পেয়েছেন অভিনয়কলায় অবদানের জন্য। তার লেখা এবং নির্দেশিত একাধিক নাটক বিশ্বের নানা
দেশে মঞ্চায়ন হয়েছে এবং প্রশংসা অর্জন করেছে।

স্বাধীনতার পরপর তিনি আরণ্যক নাট্যদল গঠন করেন। চলতি সময়েও একাধিক নাটকে অভিনয় করছেন। লিখছেন বিটিভির জন্য নতুন ধারাবাহিক নাটক। এ দেশের নাট্য আন্দোলনে তার অবদান অনেক।

আবুল হায়াত

গুণী এই অভিনেতা কখনো অভিনয়ে বিরতি নেননি। টানা অভিনয় করছেন বছরের পর বছর। নাটক পরিচালনা করছেন নিয়মিত। অভিনয় জীবনে বহু আলোচিত ও সাড়া জাগানো নাটকে অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। একটা সময়ে বাবা চরিত্রে তার অভিনয় ছিল সবার চোখে পড়ার মতো।

এছাড়া হুমায়ুন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে টানা মঞ্চে অভিনয় করেছেন দীর্ঘ দিন। এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, নিমফুল নাটকগুলো তার জীবনের অন্যতম সেরা নাটক।

নাটকের পাশাপাশি অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই  শিল্পী। তিতাস একটি নদীর নাম, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, আগুণের পরশমণি, অবুঝ দুটি মন, স্বপ্নের ঠিকানা তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা।

গত বছর তার অভিনীত রাত জাগা ফুল, স্ফুলিঙ্গ সিনেমা দুটি মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া চলতি বছর নতুন সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

আসাদুজ্জামান নূর

ভালোবেসে কেউ কেউ তাকে অভিনয়ের রাজা বলে ডাকেন। টেলিভিশন নাটকে রাজত্ব করেছেন তিনি টানা কয়েক দশক। তার মতো সাড়া জাগানো চরিত্রে অভিনয় করার সৌভাগ্য কম শিল্পীর ভাগ্যে জুটেছে। আজও কোটি মানুষের কাছে তিনি বাকের ভাই।
কারও কাছে তিনি মির্জা। কারও কাছে নান্দাইলের ইউনুস। এ রকম কতই না চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছেন। মঞ্চে দীর্ঘকাল অভিনয় করেছেন। আগুণের পরশমণি তার বহুল প্রশংসিত সিনেমা।

অভিনয় কমিয়ে দিলেও পুরোপুরি ছাড়েননি তিনি। সবশেষ মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায়
রাজাকারের চরিত্রে অভিনয় করছেন। অভিনয়কলায় অবদানের জন্য পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার।

দিলারা জামান

টেলিভিশনের প্রথম ত্রিধারা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন দিলারা জামান। এটা ১৯৬৬ সালের ঘটনা। সেই থেকে আজও অভিনয় করে চলেছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন টেলিভিশন নাটকে। একসময় মায়ের চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি অনেকগুলো সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী। 

আগুণের পরশমণি, বৃহন্নলা, হালদা, ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ, মনপুরা তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা। তার অভিনীত সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা লাল মোরগের ঝুঁটি। বর্তমানে একাধিক ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করছেন তিনি।

আমীরুল হক চৌধুরী

মঞ্চেই অভিনয় শুরু এই শিল্পীর। তারপর টেলিভিশন ও সিনেমায় দীর্ঘকাল অভিনয় করেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় বেশিরভাগ নাটকের নিয়মিত শিল্পী তিনি। হাড়কিপটে তার অভিনীত তুমুল জনপ্রিয় একটি নাটক।

ইতিকথা, নিমফুল, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, বিয়ে হইতে সাবধানসহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। তার অভিনীত প্রশংসিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে-লালসালু, চাকা, দুখাই, পদ্মা নদীর মাঝি, দুই দুয়ারি, নিরন্তর, বাঁশি, শোভনের স্বাধীনতা।

ডলি জহুর

৫ দশক আগে মঞ্চ নাটক দিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু ডলি জহুরের। তারপর টেলিভিশন নাটকে এবং সিনেমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। এখনো টিভি নাটকে সরব আছেন। বিটিভির সোনালি দিনের বহু নাটকের শিল্পী তিনি। 

শঙ্খনীল কারাগার সিনেমায় রাবেয়া চরিত্রটি তার অভিনয় জীবনের আলোচিত একটি কাজ। গুণী এই অভিনেত্রী অসংখ্য নাটক ও সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে নন্দিত হয়েছেন।

সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে মিরানা জামান, জাহানারা আহমেদ অনেক আলোচিত নাটকে অভিনয় করেছেন। এই দুই গুণী শিল্পী অভিনয় করেন কদাচিৎ।

অন্যদিকে সিনিয়র অভিনয়শিল্পী আল মনসুর, রহমত আলী, খায়রুল আলম সবুজ এখনো অভিনয়ে বেশ সরব। নিয়মিত টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English
rising misogyny in Bangladesh

The interim government’s silence over misogyny is tragic

There is chaos and dissent in every corner and no one seems to have a grip on anything.

8h ago