৪ তারকার স্মৃতিতে পহেলা বৈশাখ

ছবি: সংগৃহীত

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি বছর। আগামীকাল শুরু হচ্ছে বাংলা নতুন বছর, পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ মানেই উৎসব এবং বৈশাখী মেলা। এই মেলার প্রচলন বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে। তাছাড়া, এই দিনে হালখাতা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

তারকাদের জীবনেও এসব রঙিন দিন এসেছে। সেসব স্মৃতি চারজন তারকা শেয়ার করেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

আবুল হায়াত

আমি তখন চট্টগ্রামে থাকতাম। অনেক বছর আগের কথা। আমার ছেলেবেলা তখন। সেই সময় চট্টগ্রামে আমাদের বাসা থেকে কিছু দূরে বৈশাখী মেলা হতো। সেই ছবি এখনো চোখে ভাসে। সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। ছেলেবেলায় বৈশাখী মেলায় গিয়েছি। তবে বৈশাখী মেলা ততটা জমজমাট ছিল না আমাদের সময়ে। তারপরও আনন্দ হতো, ভালো লাগত। অন্যরকম ছিল দিনগুলো। ছেলেবেলায় কাটানো মেলার স্মৃতি কোনো কোনো অলস দুপুরে মনে পড়ে। বাংলা নতুন বছরে আরও বেশি মনে পড়ে। আমাদের ছেলেবেলায় বাংলা নতুন বছরের দিনে হালখাতা হতো। হালখাতায় নতুন হিসাব খুলতেন ব্যবসায়ীরা। তারপর একসময় ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় যখন বুয়েটে  পড়তাম, তখন পলাশীতে থাকতাম। ওই সময় বৈশাখী মেলা হতো আজিমপুরের কাছে। এটা হতো চৈত্র সংক্রান্তির দিনে। শেষ হতো বছরের প্রথম দিনে। মাঝে মাঝে যেতাম সেখানে। এখনো স্মৃতি হিসেবে জমে আছে জীবনের ডায়েরিতে।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

তারিক আনাম খান

আমাদের ছেলেবেলায় পহেলা বৈশাখে হালখাতা হতো। বছরব্যাপী অপেক্ষা করতাম হালখাতার জন্য। আমাদের কাছে তখন হালখাতা খুব আকর্ষণীয় ছিল। কেননা, হালখাতায় মিষ্টি খেতে দেওয়া হতো। মিষ্টি খেতে পারতাম। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিষ্টি খেতে যেতাম। এটা ভীষণ আনন্দের ছিল। বছরের পহেলা দিন বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কখন মিষ্টির দোকানে যাব, মিষ্টি খাব—এই অপেক্ষায় থাকতাম। আমার বড় দুলাভাই বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কাপড়ের ব্যবসা করতেন। বছরের প্রথম দিনে তার দোকানে যেতাম হালখাতা উপলক্ষে। ওখানে গিয়ে মিষ্টি খেতাম পেটভরে। তারপর দুলাভাইয়ের হালখাতা শেষ হওয়ার পর টাকার হিসাব করতাম একসঙ্গে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির বড় উৎসব। এই উৎসবে অনেক আনন্দ করেছি।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

ফাহমিদা নবী

ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা পরিবারের সবার সঙ্গে বের হয়ে যেতাম। প্রথমে যেতাম বাংলা একাডেমিতে। ওই সময় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান হতো। আমরা তখন মোহাম্মদপুরে থাকতাম। তখনো শাড়ি পরার  বয়স হয়নি। কিন্তু চেষ্টা করতাম লালপাড়ের শাদা শাড়ি পরার। বাসায় সেদিন মজার মজার খাবার রানা হতো। পরিবারের সবাই মিলে মজার মজার খাবার খেতাম। বাংলা একাডেমি থেকে তারপর যেতাম রমনায়। ওখানে অনুষ্ঠান দেখে খুব ভালো লাগত। আসলে পহেলা বৈশাখ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এর সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আর জীবনের যতগুলো সময় পার হয়ে যাক না কেন, পহেলা বৈশাখের স্মৃতি কখনোই ভুলতে পারব না।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

ফজলুর রহমান বাবু

ফরিদপুর শহরে বেড়ে ওঠা আমার। ওখানেই আমার বাড়ি। ফরিদপুর শহরের কাছাকাছি আমার ছেলেবেলায় বৈশাখী মেলা হতো। তখন আমরা ছোট ছিলাম। অপেক্ষায় থাকতাম কবে পহেলা বৈশাখ আসবে, তারপর মেলায় যাব। সকাল সকাল বৈশাখী মেলায় যাওয়ার স্মৃতি কখনোই ভুলবার নয়। মেলায় গিয়ে নানারকম খাবার খেতাম। বিশেষ করে মিষ্টি, ছানা ও বাতাসাসহ হরেকরকম খাবার পাওয়া যেত। খেলনা বিক্রি হতো মেলায়। আমার লোভ ছিল মিষ্টির প্রতি। বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে মেলায় গিয়ে মিষ্টি খেতাম। সারাদিন আনন্দ আর হইচই করতাম। আমাদের সময় পহেলা বৈশাখের অন্যরকম অনুভূতি কাজ করত সবার মাঝে। তারপর ঢাকায় এসেও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে যাই নানাভাবে। আশির দশকে থিয়েটারের জন্য টিএসসিতে রিহার্সাল করতাম এবং ওখানে প্রচুর সময় দিতাম। আর চারুকলায় যত আয়োজন হতো, সেখানেও আমরা যেতাম। তারপর ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানেও নিয়মিত যেতাম একসময়। কাজেই পহেলা বৈশাখ আমার জীবনে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

3h ago