ঢাকাই সিনেমার দ্বন্দ্ব-বিতর্ক-মামলা
ঢাকাই বাংলা সিনেমাতে দ্বন্দ্ব, মামলা, বিতর্ক বাড়ছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সিনেমার চেয়ে এসব ঘটনা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। সম্প্রতি বাংলা সিনেমাতে কিছুটা সুবাতাস বইতে শুরু করলেও এই দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক থামছে না।
সরকারি অনুদানের সিনেমা 'আশীর্বাদ' নিয়ে কিছুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। সিনেমাটিতে কাজ করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাহিয়া মাহি। সংবাদ সম্মেলন করে সহপ্রযোজক তাহেরা ফেরদৌস জেনিফারের করা অভিযোগ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন মাহিয়া মাহি ও রোশান।
মাহিয়া মাহি বলেন, 'দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অনেক প্রযোজক, পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কারো সঙ্গে খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে, কখনো তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমার মতো এতো তিক্ত অভিজ্ঞতা কখনোই হয়নি। আমি কখনো ভাবিনি, এরকম সাংবাদিক ডেকে সবাইকে এসব বিষয়ে কথা বলতে হবে।'
'সরকারের কাছে অনুরোধ করব তারা কাদের সিনেমা প্রযোজনার অর্থ দিচ্ছে সেটা যেন যাচাই করা হয়। আমি তো প্রযোজককে দেখে অভিনয় করতে আসিনি। সিনেমায় ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল সরকার। কিন্তু আমার ধারণা এই সিনেমা বানাতে ২৫ লাখ টাকাও খরচ করেননি প্রযোজক,' বলেন তিনি।
সহপ্রযোজক তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার সিনেমায় নায়ক রোশানকে 'অপেশাদার' শিল্পী হিসেবে অভিহিত করেন। মাহিয়া মাহি শুটিং সেটে কুকুর নিয়ে আসতেন এবং সেই প্রাণীর খাবারও প্রযোজককে দিতে হত বলে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন।
এদিকে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত আলোচিত সিনেমা 'হাওয়া'র একাধিক দৃশ্যে পাখিকে খাঁচাবন্দি করে রাখার দৃশ্য আছে। এছাড়া, সিনেমার চরিত্র চাঁন মাঝি পাখির মাংস খাওয়ানোর দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তাই সিনেমাটির বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম কুমার মল্লিক জানান, মামলায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। তবে আদালত মামলাটির বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, 'নির্মাতা হিসেবে আমি এটুকুই বলতে চাই, 'হাওয়া'র পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, আর এই নির্মাণের জন্য যে সিনেমাটিক রিয়েলিটি তৈরি করতে হয়েছে তা সত্য নয়। সিনেমার শুরুতে ডিসক্লেইমারে আমরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি। পাখিটির দৃশ্যধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি তা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মাণ করা। আর চাঁন মাঝি তার প্রিয় পাখিটিকে খেয়ে ফেলে, সেটা কি শুধু ভোগ? নাকি সমাজের ভেতর জমতে থাকা হিংস্রতা? আর আমি শুধু ওই বোধটাকেই ইঙ্গিত করেছি, আর সেটা নির্মাণ করেছি সিনেমার ভাষার ভেতর দিয়ে। পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক।'
১০০ কোটি বাজেটের 'দিন: দ্য ডে' সিনেমার ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম সিনেমাটির নায়ক অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানা গেছে। মুর্তজা অতাশ গতকাল তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে 'দিন: দ্য সিনেমা' নিয়ে লিখেছেন, 'এই সিনেমা নিয়ে শুরুতে যে চুক্তি ছিল, তার কিছুই রক্ষা করেননি অনন্ত জলিল। এই সিনেমায় অর্ধেক প্রোডাকশন নষ্ট করে নিজের মতো করে সিনেমাটা মুক্তি দিয়েছেন, যেখানে আমি নিজেও সিনেমার সহ-প্রযোজক ছিলাম। সিনেমা মুক্তির আগে যোগাযোগও করেননি।'
'তাই এখন এটা নিয়ে মামলা করার চিন্তা করছি,' লিখেছেন মুর্তজা অতাশ।
এ বিষয়ে অনন্ত জলিল বলেন, 'আমার সঙ্গে বাংলাদেশের শুটিংয়ের বিষয়ে তাদের কোনো চুক্তি হয়নি। গত ৪ বছর ধরে বলে আসছি, তাদের ওখানে শুটিং তাদের খরচে হয়েছে। আর আমার এখানে আমি খরচ করেছি। তারা যে চুক্তি লঙ্ঘনের কথা বলছে তারা সেটা দেখাক। বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় তাদের ১৯ জন এখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা ছাড়া কীভাবে আমি সবকিছু করলাম।'
Comments