৫০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল নায়ক ফারুকের সঙ্গে: উজ্জ্বল
নায়ক ফারুক এবং নায়ক উজ্জ্বল ১৯৭০ সালে রূপালি পর্দায় নাম লেখান। তাদের বন্ধুত্বের বয়স ৫০ বছর। এদেশের সিনেমার অনেক ইতিহাসের সাক্ষী ২ জন। চলচ্চিত্র থেকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব। পারিবারিক পর্যায়ে ছিল যোগাযোগ।
নায়ক ফারুককে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মেগাস্টারখ্যাত নায়ক উজ্জ্বল।
উজ্জ্বল বলেন, 'নায়ক ফারুক ও আমার পরিচয় স্বাধীনতার আগে, ১৯৭০ সালে। ওই বছরই ২ জন সিনেমায় অভিনয় শুরু করি। ফারুকের প্রথম সিনেমা জলছবি এবং আমার প্রথম সিনেমা বিনিময়ের একই বছর শুটিং শুরু হয়েছিল। সেই যে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা শেষ পর্যন্ত ছিল। বন্ধুত্বে কখনো ফাটল ধরেনি।
সিনেমায় অভিনয় করলেও আমরা বন্ধু ছিলাম পারিবারিক পর্যায়ে। আমার বাসায় ফারুক আসতেন, আমিও তার বাসায় যেতাম। এতটাই আন্তরিক ছিলাম আমরা। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা সব ছিল আমাদের মধ্যে। এখন সেসব খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সোনালি সিনেমা বলা হয় আগের সিনেমাকে। তেমনই আমরা ২ জন সোনালি সময় পার করেছি। ২ জনই ২ মেরুর রাজনীতি করি। ভিন্ন মত আমাদের রাজনীতিতে। কিন্ত সিনেমায় তার প্রভাব কখনো পড়েনি। বন্ধুত্বেও প্রভাব পড়েনি। এতটাই গভীর বন্ধুত্ব ছিল।
সুখে-দু:খে ৫০টি বছর আমরা বন্ধু হয়ে ছিলাম। মান অভিমান কখনো বাসা বাঁধেনি। লোভ-লালসা গ্রাস করেনি। সবার আগে সিনেমাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তারপর পরিবার ও বন্ধুত্বকে প্রাধান্য দিয়েছি। সিনেমার ভালোর জন্য যা যা করণীয় একসঙ্গে করেছি।
কাকরাইলে আমাদের ২ জনের সিনেমার অফিস ছিল একই বিল্ডিংয়ে। কাছাকাছি রুম ছিল। দিনের পর দিন সেখানে গল্প করেছি। দিনের পর দিন সেখানে সিনেমা নিয়ে ভেবেছি। সংগঠন করেছি সিনেমা নিয়ে। শিল্পী সমিতি হোক কিংবা চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি হোক, আমরা সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। এদেশের সিনেমার জন্য নিবেদিত ছিলাম ২ জনই।
নায়ক ফারুক এবং আমি একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করতাম। আপনি থেকে কখন তুই বলে সম্বোধন করলাম তা আজ মনে নেই। কিন্ত পেছন ফিরে তাকালে স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে।
আশির দশক আমাদের ২ জনের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় এবং একইসঙ্গে দেশীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ সময়। চলচ্চিত্রের ভালোর জন্য যে কোনো সময় ডাক পড়লেই আমরা ছুটে গেছি। আজ সবকিছু থেকে দূরে চলে গেলেন আমার বন্ধু ফারুক। তার জন্য মনভরে আশীর্বাদ কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।'
Comments