জায়েদ খান-ওমর সানীকে নিয়ে যা বললেন ৪ জ্যেষ্ঠ শিল্পী
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/13/284497861_975022509857199_3992396654953899078_n.jpg?itok=NPrKSkRD×tamp=1655129747)
ঢাকাই সিনেমার সোনালি একটা সময় ছিল। গত এক দশকে রেকর্ড সংখ্যক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে, আগের মতো নেই সিনেমা নির্মাণের হিড়িক। দেশের চলচ্চিত্র জগত এখনো আলোচনাতেই আছে, তবে সে আলোচনা চলচ্চিত্র নিয়ে নয়। একের পর এক অঘটন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আছে ঢাকাই সিনেমা জগত।
সম্প্রতি ওমর সানী ও জায়েদ খানের মধ্যে বিরোধের একটি ঘটনা কেন্দ্র করে আবারও আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশে।
ঢাকাই সিনেমার ভবিষ্যত, শিল্পীদের দ্বন্দ্বসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন জ্যেষ্ঠ ৪ চলচ্চিত্র তারকা সোহেল রানা, ববিতা, উজ্জ্বল ও রোজিনা।
আমাদের শিল্পীসুলভ আচরণ করতে হবে: সোহেল রানা
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/13/kaboro_alamgir_sohel_rana.jpg?itok=b5qwTonC×tamp=1655129810)
রূপালী পর্দার এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়ক সোহেল রানা বলেন, 'আসলে মূল ঘটনা কী সেটাই তো কেউ প্রমাণ করতে পারেনি এখনো। শুধু অভিযোগ শুনছি। সত্যিই কি এমন ঘটনা ওমর সানী ও জায়েদ খানের মধ্যে ঘটেছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে? ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি না জায়েদ খান এমন কাজ করতে পারে। আমি শুনেছি ঘটনাটা। সত্যি যদি হয়, তাহলে ন্যাক্কারজনক। সত্য উদঘাটন করা দরকার।
আমাদের সিনেমার নানা ঘটনা আর সিনেমার অবস্থা নিয়ে বলতে চাই- ফিল্ম ইজ ডেড। মানুষের ২ রকম মৃত্যু হয়, শারীরিক মৃত্যু ও মানসিক মৃত্যু। আমাদের ফিল্মের অবস্থাও তাই হয়েছে। আমি মনে করি সবার আগে আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ হওয়ার বিকল্প নেই। শিল্পীরা সবার কাছে ভালোবাসার মানুষ। সেই ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য আমাদের শিল্পীসুলভ আচরণ করতে হবে। জীবদ্দশায় কেউ যদি মরে যায়, তাহলে তো সমস্যা বাড়বেই।
সবারই সংযত হওয়া দরকার: ববিতা
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/13/babita_0.jpg?itok=OdhLWV6s×tamp=1655129885)
অভিনেত্রী ববিতা বলেন, 'আমরা একটা স্বর্ণযুগ পার করে এসেছি সিনেমায়। সেই সময় বিখ্যাত সব পরিচালকরা ছিলেন। বিখ্যাত লেখকরা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। সব মেধাবীরা ছিলেন। আমাদের সিনেমা দেশে ও বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদেশের ঘরে ঘরে বাংলাদেশের সিনেমার সুনাম ছিল। সিনেমা ছিল বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। কিন্তু একটা সময়ে এসে সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেল। সিনেমায় ভাটা পড়ে গেল। ভালো গল্পের সংকটসহ নানারকম সংকট দেখা দিল একটা সময়ে। সিনেমার বড় দর্শক ছিলেন নারীরা। পরিবার নিয়ে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যেতেন। কিন্তু গল্পের ধরন বদলে যাবার বদলে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখাটা কমে গেল।
যারা সিনেমায় লগ্নি করছেন, তাদের টাকা তুলে আনাটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে একটা সময়ে। এইসব নানা কারণে আমাদের সিনেমায় ভাটা পড়ল। আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও ক্ষতির সম্মুখীন হলো, আমাদের সিনেমায় খরা চলছে।
এখন সিনেমা আগের মতো না থাকলেও আছে নানা সমালোচনা। শিল্পীদের মানুষ সম্মান করবে, এটাই সারাজীবন দেখে আসছি। শিল্পীরাও উদার হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সিনেমার কিছু মানুষের জন্যই আমরা সমালোচিত হচ্ছি। সবারই সংযত হওয়া দরকার। শিল্পের মানুষের প্রতি আলাদা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আছে সব মানুষের । তা ধরে রাখার কাজটি আমাদেরই করতে হবে।'
আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অভিভাবকহীন: উজ্জ্বল
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/13/280761154_361557035891101_8106003414680046289_n.jpg?itok=7zV-H8TT×tamp=1655130132)
আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অভিভাবকহীন। তাই নানা ঘটনা ঘটছে এখানে। স্বর্ণযুগের সিনেমার দিন শেষ হতে হতে আজকের এই অবস্থায় চলে এসেছে। আবার এটাও সত্য, কোনো কিছু ধ্বংস হলেই নতুন করে সবকিছু শুরু হয়। আমি সোনালি যুগের সিনেমার শিল্পী। সুপার সিনিয়র শিল্পী হিসেবে আমি মনে করি, শত নিরাশার মাঝেও আমি সিনেমা নিয়ে আশাবাদী মানুষ। আমি হতাশ নই। তরুণদের হাত ধরে আমাদের ফিল্ম একদিন জেগে উঠবে। দেশের বাইরেও নাম করবে। তরুণ পরিচালকরা কেউ কেউ ভালো করছেন। আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তা করতে হবে। দেশের বাইরেও সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এটা ধরে রাখতে হবে ।
আমাদের আগের মত হল নেই, সিনেমা নেই। কিন্ত নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনা আছে। যদি সিনেমার সংখ্যা বেশি থাকত তাহলে হয়ত এরকম সমস্যা হত না। সাম্প্রতিক ঘটনা শিল্পী হিসেবে অবশ্যই কষ্ট দেয়।
শিল্পী হিসেবে লজ্জা পাচ্ছি: রোজিনা
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/06/13/rozina_2.jpg?itok=VUKSeb6I×tamp=1655129995)
রোজিনা বলেন, 'ঢাকাই সিনেমায় অনেক কিছু দেখলাম। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা সোনালি সময় পার করে এসেছি। কাজেই সিনেমার ভবিষ্যত নিয়ে বলব- সিনেমার ভবিষ্যত শেষ। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যাচ্ছে কোথায়? সাম্প্রতিক ঘটনায় মাথা নিচু হয়ে আসছে। লজ্জা পাচ্ছি শিল্পী হিসেবে। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য একজন মানুষ কতটা ঘৃণ্য কাজ করতে পারে? এইভাবে একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে পচাতে পারে?
সেদিন ডিপজলের ছেলের বিয়েতে আমি ছিলাম। অনেক ভিআইপি অতিথিরা এসেছিলেন, অনেক নিরাপত্তা ছিল সেখানে। তারপরও এমন ঘটনা কখন ঘটল? কেউ দেখল না? আমি হতভম্ব, বিস্মিত। আমি বলব, সেদিন কিছুই হয়নি। একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে পচানোর জন্য ব্যক্তি স্বার্থে এই কাজটি করেছেন। কথায় আছে, চিলে কান নিয়েছে। আসলেই কি চিলে কান নিয়েছে? আমাদের আগে জানা দরকার চিলে কান নিয়েছে কি না, তা না জেনেই আমরা দৌড়াচ্ছি। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের সিনেমার।
Comments