আগামী ৫০ বছরেও কেউ রাজ্জাককে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না: সোহেল রানা

রাজ্জাক ও সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

যাদের অবদানে এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্প গড়ে উঠেছে, মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে— রাজ্জাক তাদের অন্যতম। বাংলা চলচ্চিত্রের 'নায়করাজ' তিনি। এক রকম শূন্য থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রাজ্জাক। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। অভিনয়ের জাদু দিয়ে বাঙালির মনে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন স্থায়ীভাবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে 'নায়ক' শব্দটি শুনলে আজও যেন প্রথমে মনে ভেসে উঠে তার মুখটাই।     

আজ ২১ আগস্ট নায়করাজ রাজ্জাকের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস। চোখের আড়াল হলেও রাজ্জাককে ভোলেননি ভক্তরা। যারা ব্যক্তিগতভাবে তার সান্নিধ্য পেয়েছেন, তাদের স্মৃতিতেও সমান উজ্জ্বল তিনি। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আজ রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী নায়ক সোহেল রানা।  

সোহেল রানা বলেন, 'একটি মজবুত বাড়ির জন্য শক্ত পিলারের প্রয়োজন হয়। নায়ক রাজ্জাক হচ্ছেন এদেশের চলচ্চিত্রের সেই শক্ত পিলার। ঢাকাই সিনেমাকে তিনি এতটাই শক্ত অবস্থান তৈরি করে দিয়ে গেছেন, যার জন্য যুগের পর যুগ তাকে মনে রাখতেই হবে। তার অবদান এতটাই বড় যে তা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।

অভিনয়ের জাদু দিয়ে বাঙালির মনে রাজ্জাক জায়গা করে নিয়েছেন স্থায়ীভাবে। ছবি: সংগৃহীত

সকাল থেকে রাত শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন তিনি। কখনো কখনো সারারাত শুটিং করেছেন। কিন্তু ক্লান্তি বা একঘেয়েমি নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না, কাজ করে যেতেন নিরলসভাবে।

আজকের ঢাকাই সিনেমার মূল ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন রাজ্জাক। তার মতো পরিশ্রমী অভিনেতা কমই দেখেছি। সবসময় সিনেমার জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।

একটা সময় অন্য দেশের সিনেমার জোয়ার ছিল এদেশে। অন্য ভাষার ছবিও চলত। কিন্ত এদেশের দর্শকদের নিজ দেশের সিনেমা দেখার মতো অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছেন তিনি। সিনেমার জন্য এত সংগ্রাম, ত্যাগ, কষ্ট, কজন করেছেন তার মতো? তার চাওয়া ছিল বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্র স্থায়ী হোক। কাজেই তাকে মূল্যায়ন করা কঠিন।

কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন রাজ্জাক। ছবি: স্টার

রাজ্জাকের সঙ্গে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছি। তিনি আমার সিনিয়র ছিলেন। তারপরও কোনো দিন তুমি করে বলেননি, সবসময় আপনি করে বলতেন। অন্যকে সম্মান করার মানসিকতা তার ছিল। কখনো তাকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা শুনিনি। সম্মানের আসনেই ছিলেন তিনি। এখনো আছেন।

কবরীর সঙ্গে তার জুটির কথা কি ভুলতে পারব কোনেদিন? আমি নিজেও কবরীর সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছি, আরও অনেকেই করেছেন। কিন্ত রাজ্জাক-কবরী জুটির রেকর্ড কেউ কি আমরা কেউ ভাঙতে পেরেছি? পারিনি। আগামী ৫০ বছরেও রাজ্জাক-কবরী জুটির রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবেন না।

রাজ্জাক-কবরীর পর্দার রসায়নে মুগ্ধ ছিলেন দর্শকরা। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমার শিল্পীদের মধ্যে একটা পারিবারিক বন্ধন তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। তার গুণের কথা বলে শেষ করতে পারব না। কতজনকে তিনি বিনি পয়সায় সিনেমা করে দিয়ে গেছেন! সিনেমার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল বলেই এটা সম্ভব ছিল। সেজন্য জোর দিয়ে বলব, আগামী ৫০ বছরেও নায়করাজ রাজ্জাককে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না। যতদিন এই দেশ থাকবে, এই দেশের চলচ্চিত্র থাকবে, ততদিন তাকে সম্মান, ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, বাংলা সিনেমাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছেন। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Taskforce report: 8 mega projects cost $7.5b more for graft, delay

The costs of eight mega projects soared by a staggering 68 percent, or $7.52 billion from the initial estimation, mainly due to poor and faulty feasibility studies, corruption, and delays in launch, according to the report of a government-formed task force.

10h ago