অর্থনীতির পরিধি বাড়লেও ‘ধুলোয় মিশেছে’ পুঁজিবাজার

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি প্রতি বছর গড়ে ছয় শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি দেখলেও পুঁজিবাজারে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। বলা যায়—পুঁজিবাজার হয়েছে লোকসানের বেসাতি, আকর্ষণহীন ও মন্দা থেকে আরও মন্দা।

কেন এই প্রসঙ্গ টানা হলো?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনীতির মূল প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। এটি বিনিয়োগকারীদের টানতে ও সমন্বয়ে ব্যর্থ হয়েছে। পোশাক প্রস্তুতকারকদের রপ্তানি আয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাওয়া পরিবারগুলোও পুঁজিবাজারে টাকা খাটাতে পারেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি বলেন, 'পুঁজিবাজার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঠিক বিপরীত আচরণ করেছে।'

এর পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ।

শেয়ার কারসাজি করা ব্যক্তিরা ছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে হতাশা ছাড়া আর কিছুই পাননি। বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ অনেকে পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে গেছেন। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে লগ্নি করতে দ্বিধায় পড়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে রেমিট্যান্স ছিল ১১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা পৌঁছায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে।

এই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে টাকা নিয়ে অনেকে অপেক্ষা করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার ধারাবাহিকভাবে ছিল মন্দা। তবে ২০১০ ও ২০২১ সালে কিছু দিনের জন্য ছিল অন্যরকম। ফলে, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। 
টিকে থাকার জন্য লড়াই করেছে।

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিপর্যয় থেকে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না।

সেই মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, 'অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যাংক ঋণ পেতে সমস্যার পরও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গত ১৫ বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে।'

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কাজী মনিরুল ইসলাম মনে করেন, পুঁজিবাজারের এমন পরিস্থিতির পেছনে বড় কারণ হচ্ছে বিনিয়োগযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশ কয়েকজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো হলে তারা বলেছেন, ভালো প্রতিষ্ঠানের অভাব। তারল্য সংকট।'

'এটি বাজারের জন্য বড় সমস্যা,' যোগ করেন তিনি।

দেশের সঞ্চয়ের হার বাড়ছে। কিন্তু অপর্যাপ্ত মুনাফার কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিবর্তে মানুষ টাকা ব্যাংকে রাখছেন।

'সামগ্রিকভাবে সুশাসনের অভাবের কারণে পুঁজিবাজারে ধীরগতি' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০১০ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গড় লেনদেন ছিল এক হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। পরে ২০২১ সালে গড় লেনদেন হয় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এই দুটি বছর ছাড়া আর কখনোই লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার গণ্ডি পার হয়নি। ২০২৩ সালে গড় লেনদেন ছিল ৫৭৮ কোটি টাকা।

২০১০ সালে ডিএসইর তৎকালীন প্রধান সূচক ডিএসই জেনারেল ইনডেক্স (ডিজিইএন) বেড়ে হয়েছিল আট হাজার ৯১৮ পয়েন্ট। পরে তা কমতে শুরু করে।

২০১৩ সালে ডিএসই সূচক চালুর পর ২০২১ সালে তা সাত হাজার ৩০০ পয়েন্টের বেশি হয়। মাত্র কয়েকদিন সূচক সাত হাজার পয়েন্টের ওপরে ছিল।

বর্তমানে সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের আশপাশে।

Comments

The Daily Star  | English

Those speaking against Tarique Rahman are enemies of democracy: Fakhrul

"Those who are doing this are carrying out activities to destroy Bangladesh"

1h ago