চাঙা হচ্ছে শেয়ারবাজার, প্রত্যাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে, যা সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্থান। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস সূচকের উত্থানে শেষ হয় এ সপ্তাহের লেনদেন।
এদিকে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মাত্র তিন দিনে ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ শতাংশ বা ৬৯৫ পয়েন্ট।
কারণ জানতে চাইলে সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মীর আরিফুল ইসলাম বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের উচ্ছ্বসিত মনোভাবে শেয়ারবাজার চাঙা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যখন সরকার পরিবর্তন হয়, তখন বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। তারা মনে করেন, নতুন সরকার বাজার পরিস্থিতির উন্নতিতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন করবে।'
এদিকে গতকাল নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের তিন দিন পর নতুন সরকার পেল বাংলাদেশ।
বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, দুর্বল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাড়ায় তারা খুশি। কারণ এটা ম্যানিপুলেটরদের দৌরাত্ম কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এ থেকে বোঝা যায়, বহু বছর ধরে সাইডলাইনে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ারবাজারে অর্থ ঢালছেন।
এছাড়া গতকাল ডিএসইতে টার্নওভার ১০৭ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা হয়েছে।
মীর আরিফুল ইসলাম বলেন, 'বিনিয়োগকারীরা এখন আশাবাদী। এজন্য তারা বাজারে নতুন করে অর্থ বিনিয়োগ করছে। আগে বাজারের ভগ্ন দশায় তারা হতাশ ছিল। কিন্তু এখন বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় খুশি।'
তিনি বলেন, 'আমি আশা করি বাজার ভালো থাকবে। কারণ অনেক অর্থনীতিবিদ আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য সোচ্চার, তাদের অনেকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছে।'
'এখানে সংস্কার প্রয়োজন, তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ভাল বার্তা পৌঁছাবে,' বলেন তিনি।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএস ৫৫ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস৩০ ১১০ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩২ পয়েন্টে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল উত্থানের শীর্ষে ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ২২ পয়েন্ট, এরপর ছিল যথাক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক ১৮ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ১৭ পয়েন্ট ও ইসলামী ব্যাংক ১৬ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবে অধিকাংশ শেয়ারের দাম সর্বনিম্নে নেমেছিল। তাই সাম্প্রতিক উত্থানের পরও এখনো অনেকের মুনাফা হচ্ছে না।'
'এখন বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আস্থা ফিরে পেয়েছে, তাই বাজারে ফিরছে। তারা মনে করছে এখন কারসাজি ও লোকসান হবে না।'
মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, 'ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি চালু না হওয়া ও ব্যাংকগুলো এক লাখ টাকার বেশি তুলতে না দেওয়ার পরও শেয়ারবাজারে টার্নওভার বেড়েছে। এতে বোঝা যায় বিনিয়োগকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ ঢুকিয়েছেন।'
'এতে আরও বোঝা যায়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকলে বাজারে অর্থ আসবে, মুনাফা হবে। সুতরাং, এ কথা বলা যায় যে, বাজারে আস্তা ফেরানো খুবই প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারলে অন্য সহায়তার প্রয়োজন নেই,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আসলে অস্থিতিশীল বাজারে সাপোর্ট দরকার হয়, কিন্তু কেউ এমন বাজারে বিনিয়োগ করতে চায় না।'
তার মতে, 'এ প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে সরকারের সার্বিক সংস্কার উদ্যোগের সঙ্গে মিল রেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও সংস্কার পদক্ষেপ নিতে হবে।'
অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বড় উত্থানে গতকাল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৬১ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ৭৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
Comments