ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, বিপাকে অনেক বিনিয়োগকারী

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই, পুঁজিবাজার, শেয়ারবাজার, বিনিয়োগ,
ছবি: সংগৃহীত

এক দশক আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু করেছিলেন তানভীর ইসলাম। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তার ১৭ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে। এছাড়া, তিনি একটি মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৪টি ভালো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন।

কিন্তু, পুঁজিবাজারে গত এক বছরে মূলত 'ফ্লোর প্রাইস'র কারণে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায়, নিজের কোনো শেয়ার লেনদেন করতে পারেননি তানভীর ইসলাম। অর্থাৎ, তিনি বিনিয়োগ থেকে কোনো মুনাফা তুলতে পারেননি। তবে, মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে তাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদের সীমা থেকে সরে আসার পর ব্যাংকিং খাতে উচ্চহারে সুদের কারণে তানভীর ইসলামের মতো বিনিয়োগকারীদের এ মাস থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ হারে বেশি সুদ গুনতে হতে পারে।

পেশায় ব্যাংকার তানভীর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু বিনিয়োগ থেকে কোনো আয় হয়নি, তাই এখন আমাকে পকেট থেকে সুদ দিতে হবে।'

শুধু তানভীর ইসলাম নন এমন হাজারো বিনিয়োগকারী ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এখন বিপাকে পড়েছেন। কারণ, তাদের বিনিয়োগ থেকে কোনো আয় নেই। তবে, তাদের পকেট থেকে ঋণের সুদ দিতে হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দামের পতন থামাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছরের জুলাইয়ে 'ফ্লোর প্রাইস' চালু করে।

ঠিক কী পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে এর তথ্য পাওয়া কঠিন। বিএসইসি ও ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তার মতে, এই পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার কম নয়।

কয়েক মাস আগে জামানতহীত এই ঋণের (মার্জিন লোন) সুদের হার ছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, এখন তা হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশে। বেশ কয়েকটি ব্রোকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, উচ্চ-আয়সম্পন্ন বিনিয়োগকারীদের জন্য এই হার কিছুটা কম।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশিরভাগ বাজার মধ্যস্থতাকারী ও বিনিয়োগকারী যারা শেয়ারের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো কারচুপির সঙ্গে জড়িত নন, তাদের বিনিয়োগ আটকে থাকায় তারা এখন বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছেন।'

'যেসব বিনিয়োগকারী জামানতহীন ঋণ নিয়েছেন, তাদের দায় বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন' উল্লেখ করে তিনি বিএসইসিকে ক্রমান্বয়ে 'ফ্লোর প্রাইস' বাড়ানোর অনুরোধ জানান। যেন এই কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার ধাক্কা পুঁজিবাজার সহ্য করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, 'জামানতহীন ঋণ সাধারণত ভালো শেয়ার কিনতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, বেশির ভাগ ভালো শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে আটকে থাকে।'

'এমন পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান সুদের হার বিনিয়োগকারীদের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলবে' বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, 'মধ্যস্থতাকারীরা সাধারণত বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিতে দুঃসময়ে সুদের হার কমিয়ে দেন।'

অধ্যাপক আল-আমিন কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি সমর্থন করেন না। তিনিও ফ্লোর প্রাইস ধীরে ধীরে বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

যদিও ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বেগ পাচ্ছে, তাই কম পুঁজির প্রতিষ্ঠানগুলো ও দুর্বল কোম্পানির লেনদেনের সংখ্যা বাড়ছে।

অধ্যাপক আল-আমিন আরও বলেন, 'বিএসইসির উচিত শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধ করা, যাতে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে।'

বর্তমান পরিস্থিতি ব্রোকারেজ হাউস ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউস বা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আর জামানতহীন ঋণ হিসেবে অর্থ দিতে আগ্রহী নয়। সুদের হার বাড়লেও না।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো যেহেতু সুদের হার বাড়িয়েছে, তাই মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জামানতহীন ঋণের সুদের হার বাড়ানো ছাড়া আর উপায় নেই।'

তিনি বিনিয়োগকারীদের জামানতহীন ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, এটি পুঁজিবাজার।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students, teachers call off protest after assurances

All the activities of the university will resume from tomorrow

3h ago