বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কৃত্রিম: ট্যারিফ কমিশন

ভোজ্যতেল
খুচরা-পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন—জানুয়ারিতে তেলের দাম বাড়ানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় বাজারে তেলের সরবরাহ কমেছে। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

ভোজ্যতেল উৎপাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ভোজ্যতেলের ঘাটতি নেই।

বাজারে ভোজ্যতেলের উদ্বৃত্ত আছে জানিয়ে কমিশন দাবি করেছে, ভোজ্যতেলের চলমান সংকট কৃত্রিম।

গতকাল রোববার বিটিটিসি সামগ্রিক ভোজ্যতেল সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন—বাজারে ব্র্যান্ডের বোতলজাত ও ব্র্যান্ড ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের ঘাটতি আছে। ফলে দাম বেড়েছে।

বৈঠকে দেশের শীর্ষ উৎপাদকরা জানিয়েছেন—বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট নেই। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

বিটিটিসির তথ্য দেখা গেছে—২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে এলসি।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল। গতকাল প্রকাশিত বিটিটিসির তথ্যে বলা হয়েছে, দেশে সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।

গতকালের বৈঠকে দেশের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যশস্য আমদানিকারক ও তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের সরবরাহকারী সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী জানান, গত জানুয়ারিতে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত তেল।

২০২৪ সালের একই মাসে প্রতিষ্ঠানটি ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার জানান, প্রতিষ্ঠানটি গত জানুয়ারিতে ১৫ হাজার টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছে।

গত মাসে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ প্রায় ৪৭ হাজার ৬৬৮ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছে। গত বছরের একই মাসে তা ছিল ২৫ হাজার টন।

পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল বাজারজাতকারী টিকে গ্রুপের অর্থ ও অপারেশন পরিচালক মো. শফিউল আতাহার তাসলিম জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছে।

চলতি বছর এর পরিমাণ ১১ হাজার ৮১০ টন। গত বছরের একই মাসে ছিল নয় হাজার ৫০০ টন।

বাজারে ভোজ্যতেলের সংকটের পেছনে তৃণমূল পর্যায়ে কয়েকজন ব্যক্তির মজুদদারি দায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। জানান, বেশি মুনাফা করতে অনেকে বোতল কেটে তেল বিক্রি করেছেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ বড় শহরগুলোর খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জানুয়ারিতে তেলের দাম বাড়ানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় তেলের সরবরাহ কমেছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে—প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৭৫ থেকে ১৭৬ টাকা। গত মাসের তুলনায় এক শতাংশ বেশি।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম প্রায় চার শতাংশ বেড়ে গতকাল ১৮০ থেকে ১৮২ টাকা হয়।

দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পাম ও রাইস ব্র্যান তেলের খুচরা দামও বেড়েছে।

গতকাল এক লিটারের বোতল রাইস ব্র্যানের দাম ছয় দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে ২০৫ থেকে ২১০ টাকা হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করা বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদকরা আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সয়াবিনের দাম বাড়াবেন না।'

'দেশে আমদানি বেড়েছে। বাজারে সরবরাহও বেড়েছে। কোনো সংকট নেই। এ ছাড়াও, প্রায় দেড় লাখ টন তেল আমদানির অপেক্ষায় আছে। রমজানের আগেই দেশে পৌঁছাবে।'

এদিকে সয়াবিন ও পামের ওপর চাপ কমাতে সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

1h ago