৮ বছরে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দ্বিগুণের বেশি

গত আট বছরে দেশের মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা এর জন্য বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত অপরিকল্পিত প্রকল্প ও দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। এসব ঋণ শেষ পর্যন্ত অতি দরিদ্রসহ কম আয়ের মানুষের ওপর দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ১৩৫ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

দেশের বৈদেশিক সরকারি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে অর্থ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের মোট বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়ে তিন বিলিয়ন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মাথাপিছু ঋণ বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তহবিলের একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়ে থাকতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তিগুলো ব্যয়বহুল হয়। লুটেরারা বিদেশে অর্থ পাচার করে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও খারাপভাবে নির্বাচিত প্রকল্পগুলোও সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে।'

তার ভাষ্য, বিদেশি অর্থায়নে খুলনার রূপসায় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলেও প্রকল্পের জন্য গ্যাসের ব্যবস্থা নেই। তাই প্রকল্পগুলো কাজে আসেনি। কিন্তু, দেশ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

এই অর্থনীতিবিদের মতে, সেই বিদ্যুৎ কারখানায় গেলে তা পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে সহায়তা করবে। এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।

মাথাপিছু ঋণের তথ্য উদ্বেগজনক কিনা জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, 'মাথাপিছু ঋণ যেমন বাড়ছে, তেমনি মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় ঋণ-জিডিপি অনুপাত বাড়ছে।'

বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাড়ে ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২ দশমিক ছয় শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তার ভাষ্য, 'আমরা যদি অন্যান্য দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনা করে ঋণের তুলনা করি, তবে এটি খুব বেশি নয়। আমি বলব আমাদের জিডিপির আকার বিবেচনায় এটা মাঝারি।'

'তবে ঋণ পরিশোধে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। ঋণ পরিশোধ চলমান রাখায় গত দুই বছরে রিজার্ভ কমেছে।'

বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'ডলারের বিবেচনায় ঋণ পরিশোধ বাড়তি চাপ তৈরি করছে। যদিও উচ্চ জিডিপির কারণে এটি খুব বেশি নয়।'

জাহিদ হোসেনের মতে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদি কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বকেয়া বিদেশি ঋণ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়।

গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর (এসওই) বকেয়া প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। ডলার সংকট ও প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব কমে যাওয়ায় বকেয়া বাড়ছে।'

উচ্চ মাথাপিছু ঋণের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও বেশি বিদেশি ঋণ পাওয়ার প্রচেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সরকারকে বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তাই আরও ঋণ নেওয়া ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।'

বিদ্যুৎ ও সার কিনতে যেমন বিদেশি বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, তেমনি সরকারকে ঋণ দিতে হবে। ইতোমধ্যে সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলো জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ বকেয়া পরিশোধ না করলে ভবিষ্যতে ফার্নেস অয়েল বা সার পাঠাতে পারবে না।

'এগুলো আমদানি করতে না পারলে অর্থনীতি চলবে কীভাবে? তাই বাংলাদেশের ডলার দরকার।'

তার মতে, নগদ ডলার পেতে হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ একটি বিকল্প। এসব ঋণের খরচ তুলনামূলক কম।

'এটি ছাড়া সরকারের কোনো উপায় নেই' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সরকারের উচিত সব উপায়ে অর্থ জোগাড় করা। তারা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাজেট সহায়তা চাইছে।'

যেমন, বিনিয়োগ প্রকল্পে অর্থায়ন ও গ্যারান্টি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার তহবিল নিতে পারে। এটি ডলারে দাম পরিশোধ কমাতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Yunus calls for peace

Yunus condemns attack at Amar Ekushey Boi Mela, orders swift action

In a statement, the chief adviser denounced the violence, emphasising that it goes against the open-minded spirit of the book fair, which honours the language martyrs of February 21, 1952, according to the CA's press wing

4h ago