পরিবেশবান্ধব পণ্যে বিনিয়োগ করছে রং শিল্প

পরিবেশবান্ধব রং
মহসিন হাবিব চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নতুন পণ্য উদ্ভাবনে রং তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তারা পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মহসিন হাবিব চৌধুরী।

যেমন, তারা সীসামুক্ত ও জৈব উপাদানসমৃদ্ধ রং তৈরি করছেন। কারণ এ ধরনের পণ্য বায়ুদূষণ কমাতে অবদান রাখে। মহসিন হাবিব চৌধুরী সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন।

তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অন্যান্য খাতের মতো রং শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া দিকে ইঙ্গিত করে মহসিন হাবিব চৌধুরী বলেন, 'আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল রং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ।'

রং শিল্পে ২৯ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা তার। পেশাগত জীবনে তিনি নতুন ব্যবসার বিকাশ ও কার্যকর ব্যবসায়িক কৌশল তৈরিতে সফল।

রং শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'লোহিত সাগরের সংঘাত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে।'

দেশের মতো বৈশ্বিক অর্থনীতিও মন্দায় ভুগছে। ফলে পশ্চিমের দেশগুলোয় চীনের রপ্তানি বেড়েছে।

তাই দক্ষিণ এশিয়ায় এখন জাহাজ সংকট।

আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল বার্জারের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকটে পড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে তাদের দুর্ভোগ কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পেছনে প্রধান বাধা।

২০১০ সাল থেকে প্রতিটি রং পণ্যের দামের পাঁচ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পূরক শুল্ক দিতে হচ্ছে।

বিলাসবহুল পণ্য না হলেও চলতি অর্থবছরের বাজেটে একই কর আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।

'অবকাঠামোকে ক্ষয় থেকে রক্ষার মাধ্যমে রং নিছক নান্দনিকতার চেয়ে বেশি কিছু' উল্লেখ করে মহসিন হাবিব চৌধুরী আরও বলেন, 'এই শিল্পকে উৎসাহিত করতে নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

রং পণ্যের বর্তমান বাজার আকার সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এ বছর সার্বিক বিক্রি ছয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে চার শতাংশ স্থিতিশীল বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে।'

দেশে দ্রুত নগরায়ণ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ নানা কারণে দেশীয় রঙের বাজার প্রসারিত হচ্ছে। তবে গত বছর দুর্বল সামষ্টিক অর্থনীতির কারণে বিক্রি সাত শতাংশ কমেছে।

তিনি জানান, দেশে মাথাপিছু রঙের ব্যবহার মাত্র এক দশমিক কেজি। ভারত ও শ্রীলংকায় তিন কেজি।

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোয় মাথাপিছু ভোগের পরিমাণ সাত থেকে ১০ কেজি। চীনে ১২ কেজি।

'আমাদের মাথাপিছু খরচ এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। কেননা, মানুষের মধ্যে রঙের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব আছে।'

'এর অর্থ স্থানীয় বাজারে এখনো প্রবৃদ্ধির বিশাল সুযোগ আছে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, অব্যাহত বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক সংকট, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ শিল্প অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ছাড়াও দেশে ডলারের ঘাটতি ও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে।

এ অবস্থায় ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হওয়ায় অনেক রং প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না।

তাছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত দুই বছরে আমদানি খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

'ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ আমদানি খরচ বাড়িয়েছে। এর জন্য পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে।'

মহসিন হাবিব চৌধুরী জানান, দেশীয় রং শিল্পে স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

তার মতে, বাজারে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য থাকলেও বার্জার সবার শীর্ষে।

তিনি বলেন, 'পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি বার্জার অঙ্গীকারাবদ্ধ।'

পাশাপাশি বার্জার স্থানীয় জলবায়ুর উপযোগী পণ্য উদ্ভাবনে সচেষ্ট।

বার্জারের ড্যাম্পগার্ড পণ্যটি একটি ভালো উদাহরণ। এটি শৈবাল, ছত্রাক, হেয়ারলাইন ফাটল ও স্যাঁতসেঁতেভাব কাটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ওয়েদারকোট স্মুথ ও ওয়েদারকোট সুপ্রিম পেইন্টগুলো বৈরী আবহাওয়াতে কার্যকর।'

এ ধরনের উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, 'বার্জারই প্রথম কালার ব্যাংক মেশিন চালু করেছে যেখান থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি শেড বেছে নেওয়া যায়।'

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh vs singapore

Bangladesh-Singapore clash lights up stadium

Banners bearing the portrait of Hamza Choudhury waved high as supporters of all ages celebrated the occasion like a festival-- proving that when the stakes are high, Bangladeshi football can still command a crowd.

1h ago