কোরবানির ঈদেও ফ্রিজের বাজার ঠান্ডা

ফ্রিজ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

মূলত কোরবানির ঈদকে বিক্রির 'মৌসুম' হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন দেশের ফ্রিজ বিক্রেতারা। কিন্তু, এবারের ঈদুল আযহায় ফ্রিজের বাজার 'ঠান্ডা' পেলেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে গৃহস্থালি সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবারের কোরবানির ঈদে ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের বিক্রি কমেছে ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে—গত জানুয়ারি থেকে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। গত মে মাসে তা ছিল নয় দশমিক ১৯ শতাংশে। গত অর্থবছরে এর গড় ছিল নয় দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এর প্রভাব পড়েছে কোরবানির ঈদের ফ্রিজের বাজারে। কারণ ক্রেতারা খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।

সাধারণত কোরবানির মাংস সংরক্ষণে গৃহস্থালি সামগ্রীর চাহিদা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তবে ফ্রিজের খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের সামগ্রিক বিক্রি প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা গেছে যে সাধারণত সারা বছরের মোট বিক্রির প্রায় ৩০ শতাংশ হয় ঈদুল আযহায়। কিন্তু, এ বছর পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় বিক্রি চার ভাগের এক ভাগ হতে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সর্বোচ্চ সাত লাখ ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের বিক্রি হয়েছে। এটি স্বাভাবিক সময়ে থাকে আট লাখের বেশি।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কালামিয়া মার্কেটের বিশ্বাস ইলেকট্রনিকসের মালিক সাব্বির আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার আমরা ৩০টির মতো ফ্রিজ বিক্রি করতে পেরেছি।'

ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনারসহ ওয়ালটনের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের এই খুচরা বিক্রেতা আরও বলেন, 'গত পাঁচ-ছয় বছরে ঈদের এমন মন্দা বাজার দেখিনি।'

তবে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের রেফ্রিজারেটরের প্রোডাক্ট ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম রেজা ডেইলি স্টারকে জানান, কম দামে নতুন মডেলের ফ্রিজ থাকায় তাদের বিক্রি বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'সার্বিক বিক্রি আগের বছরের তুলনায় আট থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কয়েকটি জেলায় বিক্রি কমেছে।'

ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস রিতেশ রঞ্জন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাকার দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ বছর মাঝারি ও বেশি দামের ফ্রিজ বিক্রি অন্তত ১৫ শতাংশ কমেছে।'

তার মতে, ৫০ হাজার টাকার বেশি দামের ফ্রিজ ও ৩০০ লিটারের বেশি ধারণ ক্ষমতার ডিপ ফ্রিজের চাহিদা কম। এ থেকে বোঝা যায় যে মাঝারি ও বেশি দামের পণ্যের চাহিদা কম।

তিনি আরও বলেন, 'তাপপ্রবাহের সময় এয়ার কন্ডিশনার ও গত ঈদুল ফিতরে মানুষ টাকা খরচ করেছে। তাদের সার্বিক আয় কমে যাওয়ায় ফ্রিজ বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।'

কম দামের ফ্রিজের বিক্রি কিছুটা ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছরের মতো এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দুই হাজার ফ্রিজ বিক্রি করেছে ট্রান্সকম।

এলজি ও বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাই গ্রুপের বিক্রয় পরিচালক মকবুল্লা হুদা চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় ফ্রিজের সার্বিক বিক্রি কমেছে ১৩ শতাংশ ও ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ।'

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। গত দুই বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ নিত্যপণ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই বিলাসবহুল পণ্যের বিক্রি কম।'

ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফসার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারিনি।'

মূল্যস্ফীতিই মূল কারণ বলে মত দেন তিনি।

র‌্যাংগস ইমার্টের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মুহাম্মদ নাফিস ইমতিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে বিক্রি কিছুটা কমেছে। পণ্যের দাম বাড়ায় আয় বাড়লেও বিক্রি কমেছে।'

তিনি জানান, ধনী ক্রেতারা বুঝতে পেরেছেন যে সরকার নতুন বাজেটে ফ্রিজের ওপর ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করার পরিকল্পনা করায় ফ্রিজের দাম বেড়ে যাবে।

'নতুন দাম কার্যকর হওয়ার আগেই তারা ফ্রিজ কিনেছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন 'কোরবানির আগের মাসগুলোয় বিক্রি কিছুটা বেড়েছিল।'

তিনি জানান, গত বছরের ঈদুল আযহার তুলনায় তাদের পণ্যের বিক্রি প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।

ট্রান্সকম ডিজিটালের রঞ্জন মনে করেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

Comments

The Daily Star  | English
shutdown at Jagannath University

Students, teachers call for JnU 'shutdown'

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

5h ago