বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি ডলার ছাড়াল

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকেই প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের কমবেশি ছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উচ্চ সুদ পরিশোধ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার কারণে গত অর্থবছরে তা বেড়ে ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৮ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩২ দশমিক আট শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ১৮০ কোটি ডলার। এর আগের বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ১০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।

ইআরডি সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

গত অর্থবছরে পরিশোধিত অর্থের মধ্যে ২৬৭ কোটি ডলার ছিল সরকারের ঋণ বাবদ এবং ২১১ কোটি ডলার ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বাবদ।

উভয় বিভাগের ঋণই ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি যথেষ্ট। কারণ এর মোট বকেয়া ঋণ কেবল আট বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে সরকারের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছয় হাজার ২৪০ কোটি ডলার।

গত বছরের জুন পর্যন্ত সরকারি খাতের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৮০ কোটি ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছে, যার সুদের হার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চেয়েও বেশি। ফলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

'দুই বছর আগেও এ ধরনের ঋণে সুদের হার ছিল এক শতাংশের নিচে। এখন তা আট শতাংশেরও বেশি', বলেন তারা।

ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

অপরিশোধিত তেল আমদানিতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১১২ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।

বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ ২৭ শতাংশ বেড়ে ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে উড়োজাহাজ কিনতে নেওয়া ঋণের জন্য সরকার ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি।

তবে সরকারের বৈদেশিক ঋণের অনুপাত জিডিপির তুলনায় ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং প্রান্তিকের তুলনায় ৪০ শতাংশ, যার অর্থ বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে এখনো বাংলাদেশের অবস্থান নিরাপদই আছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চলতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ ও রাজস্ব আয় এবং অনুদানের অনুপাত শতভাগ ছাড়িয়ে যাবে।

'এর অর্থ এই নয় যে উদ্বেগের কিছু নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুটি উদ্বেগের বিষয় হলো—কম রাজস্ব আদায় ও চলমান ডলার সংকট', বলেন তিনি।

রাজস্ব আদায় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঋণ পরিশোধের চাপ এখনো অনেক বেশি এবং এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

'পাশাপাশি ভবিষ্যতে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে সরকারকে', যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

'ফ্লো অব এক্সটারনাল রিসোর্সেস' শীর্ষক ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পরিবর্তনশীল সুদে কিছু ঋণ নেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার পরিবর্তনশীল হলে ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রতিবেদনে সুদজনিত ঝুঁকির কথা স্বীকার করা হলেও অন্য সব সূচকই ঝুঁকিসীমার নিচে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বর্তমান শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী বাংলাদেশকে 'কম ঋণগ্রস্ত' দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও গত দেড় বছরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh 2025-26 budget

Budget to shrink amid fiscal strain

Bangladesh’s interim government is preparing to unveil a rare contractionary budget on June 2, driven by a sharp rise in interest payment that is crowding out fiscal space and forcing spending cuts.

12h ago