সৌরসেচ বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল সাশ্রয় করবে

সৌরসেচ
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় জমিতে সেচ দিতে সোলার পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার ফাইল ফটো

সৌরসেচ বা সোলার ইরিগেশন পাম্প (এসআইপি) চালু করা হলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ডিজেলের ব্যবহার বছরে ১০ লাখ টন কমাতে পারবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রস্তাবিত রোডম্যাপে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চলতি মাসে প্রকাশিত 'রোড ম্যাপ টু স্কেল আপ সোলার ইরিগেশন পাম্প ইন বাংলাদেশ (২০২৩-২০৩১)' প্রস্তাবে এডিবি বলেছে—এ ছাড়াও, সৌরসেচ প্রতি বছর ৩০ লাখ টন কার্বনডাই অক্সাইড দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।

এডিবির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সেচের জন্য প্রায় ১২ লাখ ২০ হাজার ডিজেল পাম্প ও চার লাখ ৩০ হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করা হয়। এটি দেশের মোট কৃষি খরচের ৪৩ শতাংশ।

ডিজেল পাম্পের পরিবর্তে আধুনিক ও কার্যকর সৌরসেচ ব্যবহার করা গেলে একদিকে নবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে আমদানি করা ডিজেলের ওপর নির্ভরতা কমবে।

রোডম্যাপ অনুসারে, চার কিলোওয়াট থেকে ২৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত পাম্প রেটিংসহ ৪৫ হাজার সৌরসেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা হলে দেশে এক হাজার মেগাওয়াট পিক (এমডব্লিউপি) সৌরশক্তি পাওয়া যাবে। এ দিয়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার মাধ্যমে ১৩ লাখের বেশি কৃষককে সেবা দেওয়া যাবে।

প্রতিটি সৌরসেচ ব্যবস্থায় ভূপৃষ্ঠের পানি সেচের জন্য ১৫ হাজার সৌর লো-লিফট পাম্প, দুই হাজার সৌর গভীর নলকূপ ও ভূগর্ভস্থ পানি সেচের জন্য ২৮ হাজার অগভীর নলকূপ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

পাশাপাশি, এটি প্রতি বছর গ্রিডে ৪৮০ গিগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, যা বর্তমানে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের প্রায় এক শতাংশ।

প্রস্তাবিত সৌরসেচের লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত কৃষি খাতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উচ্চাভিলাষী।

এটি বাস্তবায়নে ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন বাড়াতে এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

এডিবি জানিয়েছে, বিদ্যমান ডিজেল পাম্পগুলোকে সৌর ফোটোভোলটাইক সেচ পাম্পে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে তারা ৪২ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ২০ দশমিক ২৪৪ মিলিয়ন ডলার 'স্কেলিং-আপ অব রিনিউয়েবল এনার্জি প্রোগ্রাম' থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাঠামোগত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার প্রয়োজন।

তাই টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা।

এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক কেনিচি ইয়োকোয়ামা বলেছেন, এই রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত উদ্যোগ, নীতিগত হস্তক্ষেপ ও স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতার রূপরেখা দেওয়া আছে, যা একটি টেকসই ভবিষ্যতের মঞ্চ তৈরি করবে।

তিনি আরও বলেন, 'রোড ম্যাপে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত যুক্ত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশকে সৌরসেচ গ্রহণে দিকনির্দেশনা দেবে, যা কৃষি খাতের কর্মক্ষমতা বাড়াবে এবং জীবনমান উন্নয়নে পানি ও জ্বালানি সমস্যার মোকাবিলা করবে।

ইয়োকোয়ামা মনে করেন, এই রোডম্যাপের বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে সেচের জন্য টেকসই ও নিরাপদ উৎস পেতে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, 'এটি পরিবেশবান্ধব ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করবে। সৌরশক্তি ও টেকসই কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলে স্থিতিস্থাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।'

ইয়োকোইয়ামা বলেন, 'এডিবি ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিশ্রুত ৩৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

11h ago