রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক-এডিবির ঋণ নয়, চাই অনুদান: টিআইবি

tib
টিআইবির লোগো | সংগৃহীত

রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য ঋণ নয়, সহায়তা অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ সোমবার দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এই আহ্বান জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ, যার ৫৩৫ মিলিয়ন ডলারই ঋণ এবং ৪৬৫ মিলিয়ন অনুদান। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে টিআইবি। রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য ঋণ নয়, সহায়তা অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

পাশাপাশি, এই নিপীড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়।

টিআইবি মনে করে, রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবিলার সব ভার শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সংহতি। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চই করেছে বাংলাদেশ। এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকটসংশ্লিষ্ট সব খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি প্রমাণ করার একটি সুযোগও পাচ্ছে যে, তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র নির্বিচার ঋণ ব্যবসাতে সীমাবদ্ধ নয়।'

বাস্তুহীন রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান কমানোর প্রবণতায় টিআইবি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে বলা হয়, এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়—আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে কাপুরুষের মতো তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এই বোঝা বহনের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনুদান কমে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু খাদ্য সহযোগিতায় বরাদ্দ প্রতিমাসে ১২ ডলার থেকে আট ডলারে নেমে এসেছে।

ড. জামান বলেন, 'বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মিয়ানমারের বহুমাত্রিক অংশীদারত্ব, স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দায়িত্ব হলো—রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের টেকসই সমাধান এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো।'

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সমন্বয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, 'রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর চলমান নিপীড়নসহ এই সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় জাতিসংঘকেও কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়েছে এবং মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের অধিকার তাদের আছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন-গণহত্যা থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বইতে গিয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি চাপে রয়েছে। এখন সেই চাপ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে বাধ্য করার মতো নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য কাজ আর কী হতে পারে!'

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu says Israel close to meeting its goals in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

17h ago