বিলাসবহুল হোটেলগুলোর মূল আয় রুম ভাড়া থেকে নয়

বিলাসবহুল হোটেল
দেশের ছয় শীর্ষ বিলাসবহুল হোটেলের মোট আয়ের বেশিরভাগ এসেছিল খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে। ছবি: সংগৃহীত

দেশের বেশিরভাগ বিলাসবহুল হোটেল রুম ভাড়ার তুলনায় বেশি আয় করে খাবার ও পানীয় থেকে।

অন্যদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশের হোটেলগুলোর খাবার ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান থেকে উপার্জন কম। এসব হোটেল রুম ভাড়া থেকে বেশি আয় করছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ছয় শীর্ষ বিলাসবহুল হোটেলের মোট আয়ের ৪৯ শতাংশ ছিল খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে। আর রুম ভাড়া থেকে আয় আসে ৩৬ শতাংশ।

এসব হোটেলের মধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে ১১১ কোটি টাকা আয় করেছে। এটি এর মোট আয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ।

ইন্টারকন্টিনেন্টালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড একই বছর রুম ভাড়া থেকে আয় করেছে ৪২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাবারের মান এবং দূরত্ব বিবেচনায় মধ্য ঢাকার অতিথিরা আমাদের হোটেলটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পছন্দ করেন। ফলে খাবার বিক্রি করে আমাদের বেশি আয় হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় যানজটের কারণে আমরা পর্যাপ্ত বিদেশি অতিথি পাই না।'

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হওয়ায় আরও বিদেশি অতিথিকে আকৃষ্ট করা যাবে বলে আশা করে আতিকুর রহমান বলেন, 'এটি আগামী বছরগুলোয় আমাদের রুমের চাহিদা বাড়িয়ে দেবে।'

গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি ইন্টারকন্টিনেন্টাল বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন, এর ছাদ-বাগানে উৎপাদিত অরগানিক শাকসবজি অতিথিদের পরিবেশন করা হয়।

২০১৫ সালে সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে আছে। এর আগের বছরের ১১০ কোটি টাকা থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।

বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় লা মেরিডিয়ান হোটেল রুম ভাড়া থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করছে।

লা মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস কর্তৃপক্ষ ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, রুম ভাড়া থেকে তাদের আয় হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এটি মোট আয়ের ৫১ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাবার ও পানীয় বিক্রি করে তাদের আয় হয়েছে ৯৯ কোটি টাকা।

বেস্ট হোল্ডিংসের কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুম ভাড়া থেকে বেশি আয় হওয়ার মূল কারণ এর অবস্থান। বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের রুমগুলো ভাড়া হওয়ার হার বেশি।'

হোটেলটির প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ রুমেই অতিথি থাকে। কখনো তা শতভাগে পৌঁছায়।

চাহিদা মেটাতে হোটেলটিতে আরও ৫৮টি রুম সংযোজন করা হচ্ছে। দেশের হোটেলগুলোর মধ্যে এর রুম সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

যদিও হোটেলটির অবস্থান এর জন্য আশীর্বাদ, তবে ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে এর দূরত্ব বেশি হওয়ায় খাবার-পানীয় বিক্রি থেকে আয় কম। ইভেন্টও কম হয়।

শেরাটন ঢাকা ও ওয়েস্টিন ঢাকার মালিকানাধীন ইউনিক হোটেল, সি পার্ল কক্সবাজার বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও পেনিনসুলা চিটাগাং-ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওয়েস্টিন গুলশানে হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে এর দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই, রুম ভাড়া ও খাবার থেকে এর আয় প্রায় সমান।

হোটেলটি রুম ভাড়া থেকে ৯৭ কোটি টাকা এবং খাবার ও পানীয় থেকে ৯২ কোটি টাকা আয় করেছে।

ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোটেলগুলো মূলত ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও কূটনৈতিক অঞ্চলে থাকায় সেখানে বিদেশি, স্থানীয় অতিথি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আসা সহজ।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউনিক হোটেলের মুনাফা ১৯২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আগের অর্থবছরে তা ছিল ৯৯ কোটি টাকা।

মূলত একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় এর মুনাফা অনেক বেড়েছে। ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ১১২ কোটি টাকা পেয়েছে।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়েরও রুম ভাড়ার তুলনায় খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে আয় বেশি।

হোটেলটির জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাফেউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আয়ের ৬০ শতাংশ রুম ভাড়া এবং বাকিটা খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে আসে।'

তিনি আরও বলেন, 'সাধারণত কর্পোরেট ও সরকারের অনেক অনুষ্ঠান এই হোটেলে আয়োজন করা হয়। তাই ৪৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ রুম ভাড়া হয়ে যায়।'

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পর হোটেল ব্যবসা চাঙ্গা হয়েছে। তবে অবরোধের কারণে অতিথিদের চলাচল সীমিত হওয়ায় ব্যবসায় এর প্রভাব পড়ছে।'

বন্দরনগরীর পেনিনসুলা চিটাগাং ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার কোটি টাকা লোকসান করেছে। এর আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল দুই কোটি ২৪ লাখ টাকা।

খাবার ও পানীয় বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ২০ কোটি টাকা। রুম ভাড়া থেকে আয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।

সি পার্ল কক্সবাজার বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা খাবার-পানীয় থেকে ৭৩ কোটি টাকা ও রুম ভাড়া থেকে ৩১ কোটি টাকা আয় করায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ১৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মো. আজহারুল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুমের সংখ্যা বা রুম ভাড়া না বাড়লে আয় বাড়ানোর উপায় নেই। তবে বিশেষ অফার দিয়ে খাবার বিক্রি থেকে বেশি আয়ের অনেক সম্ভাবনা আছে। আমরা এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছি।'

তিনি জানান, হোটেলটি নতুন রেস্টুরেন্ট খোলায় স্থানীয়দের মধ্যে মজাদার খাবার সরবরাহ করে। সেগুলোর দামও যৌক্তিক বলেও জানান মামুন।

'আমাদের ওয়াটার পার্কে বেড়াতে আসা অতিথিদের অনেকে আমাদের রেস্টুরেন্টে খান। তাছাড়াও, সৈকতে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা আমাদের কাছ থেকে খাবার কিনেন। তাই খাবার সরবরাহ করে বাড়তি আয় হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

12h ago