২২ মাসের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার প্রবণতা অব্যাহত আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংকটের আশঙ্কায় ব্যাংক আগের মতো ঋণ দিচ্ছেন না। একইসঙ্গে ঋণগ্রহীতারা আগের মতো ঋণ নিচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আগস্টের প্রবৃদ্ধি ছিল ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন, তখন বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের এই ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যাশা।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৯ শতাংশ সুদের সীমা প্রত্যাহারের পর ঋণের সুদ হার বাড়তে শুরু করে। ফলে, ঋণগ্রহীতারা ধীরগতিতে ঋণ নেওয়ার কৌশল নিয়েছেন।'
চলতি বছরের জুনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক এই সীমা প্রত্যাহার করে এবং ঋণের সুদ হার নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের মুভিং এভারেজ রেটে ৩ শতাংশ মার্জিন আরোপ করতে পারবে, যা স্মার্ট নামে পরিচিত। গত সেপ্টেম্বরে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে, আগস্টে ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমায় ডলার সাশ্রয়ী উদ্যোগ নেওয়ায় আমদানি কমেছে। আগামী বছর ঋণের চাহিদা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের চাহিদা কমেছে। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
তিনি বলেন, 'বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর ব্যবস্থার কারণে গাড়িসহ বিলাসবহুল পণ্য আমদানি অনেক কমে গেছে। গত এক বছরে রিজার্ভ প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।
নতুন ঋণ দিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকটের জন্য ঋণ পুনরুদ্ধারের ধীর গতিকে দায়ী করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা ক্রমাগত কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক এখন তারল্য ঘাটতির মুখে পড়েছে। তাই কল মানি মার্কেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সাত দিনের পুনঃক্রয় চুক্তি (রেপো) সুবিধার আওতায় ছয়টি ব্যাংক ও একটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা নিয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ব্যবসাতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে রপ্তানি আদেশও কমেছে।
Comments