বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা

টাকা, বিদেশি মুদ্রা, ডলার, পাউন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো,

চলতি বছর ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড দরপতন হয়েছে, সেই পথে হাঁটছে বিশ্বের প্রধান প্রধান মুদ্রা। অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে এসব মুদ্রার দর বাড়ছে। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, চীনা ইউয়ান, জাপানি ইয়েন ও ভারতীয় রুপি ইত্যাদি।

গত বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংকে টাকার বিপরীতে প্রতি ডলারের দর ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, যা গত বছরের একইসময়ে ছিল ৯৫ টাকা। ইউরোর দর ছিল ১১৯ টাকা ৬৬ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৯৫ টাকা ১৫ পয়সা।

চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত টাকার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সুইস ফ্রাঁর ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এর পরেই আছে ইউরো (২৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ), পাউন্ড স্টার্লিং (২৪ দশমিক ৪ শতাংশ), সৌদি রিয়াল (১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ), মার্কিন ডলার (১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ), অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ), ভারতীয় রুপি (১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ), ইয়েন (১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ) এবং ইউয়ান (৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ)।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য মার্কিন ডলারের মাধ্যমে হয়, বাকি ১০ শতাংশ হয় অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে।

তারা আরও বলেন, অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বাড়লেও সেটা খুব বেশি নয়।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারকে সবচেয়ে টেকসই মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার মান স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এ কারণে মার্কিন ডলারের প্রতি আস্থা বেশি ও বিশ্বস্ত মুদ্রা হিসেবে দেখা হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন ডলারকে বিভিন্ন হার নির্ধারণের রেফারেন্স হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

'ক্রস কারেন্সি রেট বিবেচনায় আমরা ইউরো, পাউন্ড ও ইউয়ানের মতো অন্যান্য মুদ্রাতেও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করছি,' বলেন তিনি।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, 'রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমাদের আমদানি বিল বেশি পরিশোধ করতে হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতির অন্যতম একটি কারণ। বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হলে আমাদের নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজতে হবে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় সব মুদ্রারই অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ কারণে টাকাও বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে দুর্বল হয়ে পড়েছে।'

তিনি বলেন, 'তবে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো- আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি ও ঋণের সুদের হার কম থাকায় আমাদের স্থানীয় মুদ্রা তীব্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে।'

তিনি মনে করেন, মূল্যস্ফীতি না কমলে বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হতে পারবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, তবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে এখনো মার্কিন ডলার আধিপত্য ধরে রেখেছে।

তিনি আরও জানান, বাণিজ্যযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সংখ্যাও বেড়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, স্থানীয় ব্যাংকগুলো চীনা ইউয়ানে তাদের ঋণদাতা বা বিদেশের শাখায় হিসাব রাখতে পারবে, যেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা মুদ্রা ব্যবহার করে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, সরকার ২০১৪ সালের মার্চে একটি গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে চীনা ইউয়ানকে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ও ভারত রুপিতে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করে।

সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আটটি বৈদেশিক মুদ্রা- মার্কিন ডলার, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুর ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, সুইস ফ্রাঁ ও চীনা ইউয়ান ব্যবহার করে বৈদেশিক বাণিজ্য নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

5h ago