লবণের দাম বাড়ায় কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
আর এক দিন পরই ঈদুল আজহা। এই ঈদকে ঘিরে দেশের সব আড়তে চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে।
কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের মূল উপাদান লবণের চলতি মৌসুমে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মজুতের পরিমাণও ভালো।
তবে বাড়তি দামের কারণে চিন্তিত চামড়া সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, লবণের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে চামড়া সংরক্ষণ ব্যাহত হতে পারে।
লবণ ব্যবসায়ীদের মতে একটি গরু বা মহিষের চামড়া সংরক্ষণ করতে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণের প্রয়োজন। তারা জানান, ২০২২ সালে পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি, লবণের মূল্যসহ প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।
তাদের ধারণা, এবার ব্যয় বেড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এ বছর।
মাঠ পর্যায়ে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৭০ টাকা দরে। তবে লবণের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে প্রতি বস্তা অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। অথচ গত বছর ঈদুল আজহার আগে লবণের দাম সর্বোচ্চ ছিল ৮০০ থেকে ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৫০ টাকা বেড়েছে অপরিশোধিত লবণের দাম।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ ২২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা পুরো দেশের চাহিদা পূরণে প্রায় সক্ষম। এরপরও মাঝিরঘাট এলাকার সল্ট মিল গেটে লবণের দাম গত বছরের তুলনায় বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০-১৫০ টাকা বেশি৷
লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রামমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুসাইন মুহাম্মদ অভিযান পরিচালনা করেন। লবণ উৎপাদন, মজুত, নিয়ন্ত্রণ ও বাজারজাতকরণ মনিটরিংয়ে সম্পৃক্ত সরকারি সংস্থা বিসিক চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিজিএম নিজাম উদ্দিন অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।
তৌহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'মাঝিরঘাটে অবস্থিত ৩৭টি সল্ট মিল পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে, বাজারে পর্যাপ্ত লবণ মজুত আছে। অধিকাংশ মিল মালিক জানিয়েছেন, কক্সবাজারের মাঠ পর্যায় থেকে আরও বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত লবণ (ক্রুড সল্ট) পরিবহন প্রয়োজন।'
'আমরা বিষয়টি দেখছি। কোরবানির মৌসুমে যাতে লবনের দাম নিয়ে কেউ কারসাজি করতে না পারে সেই বিষয়ে সবাই মিলে কাজ করছি,' বলেন তিনি।
বিসিক সূত্র মতে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের সদর উপজেলা, টেকনাফ, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়ায় ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং পূর্বের বকেয়া অর্থ এখনো ফেরত না পাওয়ায় চামড়া সংগ্রহকারীরা গত কয়েক বছর ধরেই লোকসানে রয়েছে।'
'লবণ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণ করা যায় না। এ বছর লবণের বাড়তি দাম নিয়ে আরও শঙ্কা দানা বেঁধেছে। তাই লবণের দাম বাড়লে চামড়ার দামও স্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। আবার ট্যানারিগুলো সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে বাড়তি টাকাও দেবে না, এতে মার্কেটে একটি চাপ পড়বে,' বলেন তিনি।
ঈদুল আজহায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
Comments