শরীরে লবণের প্রভাব

শরীরে লবণের প্রভাব
ছবি: ডয়চে ভেলে

অতিরিক্ত লবণ শরীরে জন্য ক্ষতিকর বলেই আমরা জানি৷ কিন্তু লবণ কেন, কীভাবে, কোন মানুষের ওপর কতটা প্রভাব রাখে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অনেকেরই নেই। অথচ আধুনিক জীবনযাত্রায় সে বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি৷

জার্মান নিউট্রিশন সোসাইটি দিনে ৬ গ্রামের কম লবণ খাবার পরামর্শ দিচ্ছে৷ অথচ একটি পিৎজার মধ্যেই ১০ গ্রাম পর্যন্ত লবণ থাকে৷ ফলে মানুষ একটি মাত্র পদেই প্রায় দ্বিগুণ লবণ খেয়ে নিচ্ছেন।

গবেষণার ফল অনুযায়ী অতিরিক্ত লবণ আমাদের ইমিউন সিস্টেমের ওপর প্রভাব রাখতে পারে৷ লবণের মধ্যে যে সোডিয়াম থাকে, সেটি শেষ পর্যন্ত ইমিউন সিস্টেমের কোষে জমা হয়৷ ফলে কোষের শক্তি কমে যায় এবং কোষের পরিবর্তন ঘটে৷

বিস্ময়কর ঘটনা হলো, কোষগুলো তখন মোটেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে না, বরং অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ এর অর্থ, স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে কোষগুলো আরও জোরালোভাবে ব্যাককেরিয়াসহ অন্যান্য রোগের মোকাবিলা করতে পারে৷ বার্লিন এমডিসি বুখের ডমিনিক এন ম্যুলার বলেন, 'অতিরিক্ত সক্রিয় মোনোসাইট কোষ কার্ডিওভাসকুলার রোগও তরান্বিত করতে পারে৷ ফলে লবণের প্রভাব শুধু ভালো না শুধু খারাপ, তা বলা আরও কঠিন৷ কোনো ব্যাকটিরিয়া মোকাবিলার ক্ষেত্রে লবণ ভালো কাজও করতে পারে৷ কিন্তু সার্কুলেটরি সমস্যা আছে, এমন রোগীর জন্য সেটা একটা ঝুঁকি৷' 

একটি মাত্র পিৎজা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় না৷ সেটি খাবার ৮ ঘণ্টা পর এক ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল৷ তাতে দেখা গেল, যে ইমিউন কোষগুলোর মধ্যে শক্তির মাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে৷ কোষগুলো স্থিতিশীল হবার আগে লবণ প্রক্রিয়াজাত করে। ফলে একটি মাত্র পিৎজা খেলে ইমিউন সিস্টেমের ক্ষতি হয় না৷

অতিরিক্ত লবণ খেলে কিছু মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা দেখা যায়৷ যেমন ক্রিস্টিয়ান মাসের রক্তচাপ অনেক বছর ধরে অত্যন্ত বেশি ছিল৷ অতিরিক্ত লবণ এই অবস্থার অন্যতম কারণ৷ 

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও পুষ্টিবিদ হিসেবে মাটিয়াস লাউডেস বলেন, 'সোডিয়াম ক্লোরাইড মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লবণ, কারণ সেটি শরীরের মধ্যে পানি নিয়ন্ত্রণ করে৷ রক্তনালীর মধ্যে বাড়তি পানির কারণেই সম্ভবত রক্তচাপ বেড়ে যায়৷'

শরীরে লবণের প্রভাব

ফাস্ট ফুডের প্রতি ভালবাসাই ক্রিস্টিয়ান মাসের সমস্যার কারণ ছিল৷ দুপুরে বিরতির সময় তাকে দ্রুত কিছু একটা খেতে হতো, যদিও তিনি জানতেন যে সেই খাবার স্বাস্থ্যকর নয়৷ কিন্তু সেই অভ্যাস তিনি ত্যাগ করতে পারেননি৷ রাতের খাবারেও তার সালাদের ওপর ফ্যাটি ড্রেসিং ভরা থাকে৷ বাসায় ফিরেও তিনি আগে থেকে প্রস্তুত বার্গার খান, যার ওপর চিজ ও বেরেস্তা থাকে৷ জাংক ফুডের প্রতি দুর্বলতার কারণে শুধু তার ওজনই বাড়েনি, রক্তচাপও বেড়ে গিয়েছিল৷ 

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ মাটিয়াস রিডল বলেন, 'ক্রিস্টিয়ান মাস এর আদর্শ উদাহরণ৷ তিনি অনেক মোড়কবন্দি খাবার খান, যার মধ্যে লবণের পরিমাণ দিনে ১০ গ্রামের বেশি৷'

তিনি 'সল্ট সেনজিটিভ' হওয়ায় তার রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে৷ এক তৃতীয়াংশ মানুষের ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া ঘটে৷'

লবণের প্রতি শরীরের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকলে সেই অবস্থাকে 'সল্ট সেনজিটিভিটি' বলা হয়৷ কিডনি সেটি আরও ধীরে ধীরে নির্গত করে৷ এমন প্রতিক্রিয়া হলেও বেশিরভাগ মানুষ সে বিষয়ে সচেতন নন৷ কেউ সল্ট সেনজিটিভ কিনা, রক্ত পরীক্ষা করলেই তা জানা যায়৷

ক্রিস্টিয়ান মাসের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার ফল ছিল স্পষ্ট৷ মাটিয়াস রিডল তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, 'আপনার সল্ট সেনজিটিভিটি টেস্টের ফল ছিল ১৬৫৷ অর্থাৎ লবণ আপনার রক্তচাপ ভীষণ বাড়িয়ে দেয়৷ ফলে আপনি যত কম লবণ খাবেন, আপনার রক্তচাপও তত কমে যাবে৷ রক্তচাপ কমাতে আপনি লবণ খাওয়া কমালে সেটা ভালো পদক্ষেপ হবে৷'

ক্রিস্টিয়ান মাস এমন পরামর্শের সদ্ব্যাবহার করেছেন৷ কম লবণের মাত্রার ডায়েটের কল্যাণে তিনি নিজের রক্তচাপ কমাতে পেরেছেন৷ ফলে অনেক কম ওষুধ খেতে হচ্ছে৷ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন তার ইমিউন সিস্টেমেরও ক্ষতি করেনি৷

 

 

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago