স্মার্ট বাংলাদেশ

বাজেট যেন আওয়ামী লীগের ভিশন-২০৪১’র প্রতিবিম্ব

ছবি: পিআইডি

জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ৬ মাস আগে সরকারের ৫ বছর মেয়াদে শেষ জাতীয় বাজেট প্রস্তাব গতকাল বৃহস্পতিবার উত্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। মূলত ২০৪১ সালের মধ্যে একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিশন এবং নির্বাচনকে সামনে রেখেই যেন এই বাজেট ঘোষণা।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য 'উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা', যা গত বছরের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রৈবার্ষিক কাউন্সিলের প্রতিপাদ্যের প্রায় অনুরূপ।

আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিপাদ্য হতে পারে ২০৪১ সালের মধ্যে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণ।

রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত তাদের ঘোষণার ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করে।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্বাচন কমিশনের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন তা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৮৬৮ কোটি টাকা বেশি।

বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর থেকে নির্বাচন কমিশনের উন্নয়ন বাজেট ৪৬৭ কোটি টাকা কমবে। তবে, সাংবিধানিক সংস্থাটির পরিচালন বাজেট বাড়বে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য মোট বরাদ্দ হবে ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই পরিমাণ ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে নির্বাচন কমিশনের জন্য এই অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বাজেট ছিল ৭০০ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগের ঘোষণা এবং প্রস্তাবিত বাজেট—উভয় ক্ষেত্রেই একটি টেকসই, উদ্ভাবনী, মেধাবী ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ৪টি মূল স্তম্ভের ভিত্তিতে 'স্মার্ট বাংলাদেশের' স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি। আওয়ামী লীগের ঘোষণায়ও একই কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে। আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রেও একই বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।

তিনি চলতি অর্থবছর থেকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের জন্য বরাদ্দ ১১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগও তার ঘোষণাপত্রে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করতে পারবে।

তিনি এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশে' মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে সাড়ে ১২ হাজার ডলার, ৩ শতাংশেরও কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে, চরম দারিদ্র্য হবে শূন্য, মূল্যস্ফীতি থাকবে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে এবং বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে।

তখন রাজস্ব ও জিডিপির অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে এবং বিনিয়োগের হার হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া, দেশ শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক হবে।

স্বাস্থ্যসেবাসহ জনগণের প্রয়োজনীয় সব সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, একটি কাগজবিহীন ও নগদবিহীন সমাজ তৈরি করা হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে 'স্মার্ট বাংলাদেশে' ন্যায়বিচার ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি অঙ্গীকার ছিল টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এখন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যেখানে জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে।

বলা যেতে পারে যে তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার জন্য যুব ও নারীদের প্রস্তুত করতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US enters Israel-Iran war. Here are 3 scenarios for what might happen next

Now that Trump has taken the significant step of entering the US in yet another Middle East war, where could things go from here?

26m ago