খাদ্য আমদানি কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৭২১৪ কোটি টাকার প্রকল্প

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি জমিতে ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষক। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

ধীরে ধীরে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় শস্য বৈচিত্র্যকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

ডাল, তৈলবীজ ও উদ্যান ফসলের মতো শস্য আরও ২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বর্তমানে দেশে মোট চাষযোগ্য জমি রয়েছে ৮৮ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর।

পরিকল্পনা কমিশন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, ৫ বছরের এই প্রকল্পের অধীনে সরকার ১ কোটি ৮০ লাখ কৃষকের প্রত্যেককে একটি 'কৃষক স্মার্ট কার্ড' দেবে, যাতে তারা ভর্তুকি ও ঋণ সহায়তা পেতে পারেন। এই প্রকল্পের ১০টি উদ্দেশ্যের মধ্যে এ ২টি অন্যতম। বাকি উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন পরীক্ষাগার স্থাপন, শস্য গবেষণা ও উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং মূল্যায়নের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান এজেন্সি হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় তার বেশ কয়েকটি বিভাগকে জড়িত করার পরিকল্পনা করেছে।

'প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)' শিরোনামের প্রকল্পটি বেশিরভাগ অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ)।

সেইসঙ্গে সরকারি কোষাগার থেকে আসবে প্রায় ১ হাজার ৪৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ হাজার যুবক ও নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং বাংলাদেশের কৃষি খাদ্য মূল্য শৃঙ্খলে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, '২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশের কৃষিখাতের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে আশাবাদী। আমরা এতদিন ধরে কৃষিতে যা করতে চেয়েছিলাম, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেগুলোর সমন্বয় করতে চাই।'

'কৃষক স্মার্ট কার্ড' বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সরকারি সুবিধা প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে সারা দেশে কৃষকদের একটি ডেটাবেস তৈরি করা হবে।'

কৃষি মন্ত্রণালয় গত বছর একই ধরণের প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিল। এলাকাভিত্তিক ও চাহিদাভিত্তিক কৃষি পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ১ কোটি ৯ লাখ কৃষকের জন্য 'স্মার্ট কার্ড' দিয়েছিল।

এটি কৃষকের ডিজিটাল পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল, যা তাদের সরকারি প্রণোদনার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে।

এই লক্ষ্যে ৯টি জেলার ১৪টি কৃষি অঞ্চলে কৃষকদের ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানের জন্য ১০৮ কোটি টাকার একটি পাইলট প্রকল্প ইতোমধ্যে পাইপলাইনে রয়েছে।

কেন একই ধরণের আরেকটি কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ওয়াহিদা আক্তার জানান, তারা তাদের 'ডিজিটালাইজেশন পরিকল্পনা' অনুযায়ী প্রথম প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কিন্তু যখন বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে 'আরও আপডেটেড' প্রস্তাব পায়, তখন তারা প্রথম প্রকল্পটি বাতিল করে।

তিনি বলেন, 'পার্টনার প্রকল্প থেকে প্রতিটি পরিবার একটি স্মার্ট কার্ড পাবে, তবে এর আগের প্রকল্পে পরিবারের একাধিক সদস্যকে কার্ড নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।'

ওয়াহিদা আক্তার বলেন, আমরা আগের প্রকল্পটি চালাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, পার্টনার প্রোগ্রামের কার্ডগুলো খুব 'কার্যকর' হবে এবং অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হবে।

'আগের প্রকল্পের কার্ড তৈরির খরচ ছিল ৫৬ টাকা কিন্তু নতুন প্রকল্পের আওতায় এখন কার্ডের খরচ পড়বে ২৭০ টাকা থেকে ২৭৫ টাকা,' যোগ করেন তিনি।

প্রকল্পের অধীনে কৃষি মন্ত্রণালয় ভালো কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে ফল ও সবজি চাষের জন্য ব্যবহৃত এলাকা ৩ লাখ হেক্টরে এবং উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ২ লাখ হেক্টরে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন শরীফ জানান, তারা প্রধানত এই প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানি সম্ভাবনা অন্বেষণের পাশাপাশি শস্য বৈচিত্র্যের দিকে মনোনিবেশ করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা খাদ্য রপ্তানির জন্য বিশ্বব্যাপী মান নিশ্চিত করার জন্য আধুনিক ল্যাব সুবিধা এবং কৃষি পণ্যর জন্য স্বীকৃত পরীক্ষার প্রক্রিয়া স্থাপন করতে চাই।'

প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরবর্তীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে উত্থাপন করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

8h ago