অর্থনৈতিক সংকটেও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের চাহিদা অপরিবর্তিত

ছবি: রাশেদ সুমন

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সম্পদ ও নতুন আবাসিক প্রকল্পের বিক্রি কমলেও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক সংকট থেকে উদ্ভূত ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যাপার্টমেন্টের দামও বেড়েছে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) হিসাব অনুযায়ী, সম্পত্তির আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নির্মাণ ব্যয় প্রতি বর্গফুট দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

দেশের অন্যতম শীর্ষ রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের (বিটিআই) কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ডিএপি) কারণে নতুন আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন স্বাভাবিকের এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

উদাহরণস্বরূপ: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নতুন ডিএপি কার্যকর হওয়ার আগে প্রতি মাসে গড়ে ১০০টি বিল্ডিং পরিকল্পনা অনুমোদন করত। এখন তারা প্রতি মাসে ৩৩টি পরিকল্পনা অনুমোদন করছে।

২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকাকে বাসযোগ্য ও আধুনিক মেগা সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে গত জুলাইয়ে ২০ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টগুলোর চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে। কারণ যারা বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনেন, এই সংকটের প্রভাব তাদের ওপর পড়েনি।

বিটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ আর খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের টার্গেট কাস্টমাররা প্রিমিয়াম গ্রাহক হওয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সামর্থ্য তাদের আছে। তাই অর্থনৈতিক সংকট তাদেরকে সাধারণ মানুষের মতো মারাত্মকভাবে আঘাত করেনি।'

'এমনকি অ্যাপার্টমেন্ট বুকিংয়ের হারও আমাদের জন্য একই রয়েছে। কারণ আমরা দাম বাড়াইনি। আমরা মুনাফা মার্জিনের সঙ্গে আপস করেছি', বলেন তিনি।

এফ আর খান বলেন, 'ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিটিআইয়ের ৭২টি নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।'

তবে মুদ্রাস্ফীতির চাপের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সম্পত্তির দাম অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় নতুন বুকিং উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

বাংলাদেশের আরেক আবাসন কোম্পানি শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ  বলেন, 'মানুষ তাদের কাছে থাকা টাকা খরচ না করে রেখে দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে আমাদের কোম্পানির বিক্রি কমে গেছে।'

এ ছাড়া কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ডেভেলপার জমির মালিকদের সঙ্গে পারস্পরিক চুক্তির আওতায় নতুন প্রকল্প নির্মাণে ধীরগতি দেখিয়েছেন।

এমনকি মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে উপকরণ আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার বিষয়টিও সংস্থাগুলোর পক্ষে খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

তানভীর আহমেদ আরও বলেন, 'আর ব্যাংকগুলো রপ্তানি এক্সপোজারযুক্ত কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে বেশি ইচ্ছুক। কারণ তারা বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারে। সেটাও এর জন্য দায়ী।'

লিফট ও জেনারেটরের মতো যান্ত্রিক পণ্য আমদানি বিলম্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, '১০০ শতাংশ অগ্রিম পেমেন্ট দিয়েও এখন এলসি খোলা কঠিন।'

তার মতে, জমির মালিকরা নতুন ডিএপির প্রভাব বিবেচনা করে তাদের চুক্তিনিষ্পত্তি করতে আরও সময় নিচ্ছেন। সুতরাং, নতুন প্রকল্পগুলো চালু করাও কমছে।

'আমি মনে করি প্রতিটি ব্যবসায়িক চক্রে উত্থান-পতন রয়েছে। প্রথমে আসে কোভিড-১৯ মহামারি। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করছে।'

নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অ্যাপার্টমেন্টের দাম সামঞ্জস্য করতে বাধ্য হওয়ায় আবাসন কোম্পানিগুলো বিক্রির মন্দা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

রিহ্যাবের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্কিরোস বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ডিএপির প্রভাবও বিবেচনায় নিতে হবে।

'ডিসেম্বরে রিহ্যাব মেলায় বিভিন্ন অফারের কারণে আবাসন কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিল। তবে এই বিক্রি বছরব্যাপী ব্যবসায়িক পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করে না।'

২০২১ সালে প্রায় ১০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছিল। কারণ কিছু গ্রাহক মহামারির প্রভাব এড়াতে সক্ষম হয়েছিল এবং সরকার আবাসন খাতে করবিহীন আয়ের বিনিয়োগের জন্য সাধারণ ক্ষমা বাড়িয়েছিল।

তবে যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ২০২২ সালে অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং প্রায় ৬ হাজার ইউনিটে নেমে এসেছে।

মাহমুদ বলেন, 'আবাসন কোম্পানিগুলো নতুন উদ্যোগের বিষয়ে সতর্ক থাকায় বাজারে কোনো প্রস্তুত অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া যায় না এবং তারা কেবল পূর্বে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো নির্মাণ করছে।'

ব্র্যাক ব্যাংকের গৃহঋণ নিয়ে কাজ করা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের জন্য অর্থায়নের চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে।'

নতুন প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যেসব আবাসন কোম্পানি বহুতল ভবনের জন্য অগ্রিম অনুমতি নিয়েছিল, তারা পর্যায়ক্রমে নির্মাণকাজ শেষ করছে। কারণ তারা জানে যে অদূর ভবিষ্যতে রাজউক এ ধরনের অনুমোদন দেবে না।'

'বিলাসবহুল ও নিয়মিত উভয় ক্ষেত্রেই অ্যাপার্টমেন্ট কিনছেন সেই ধরনের গ্রাহকরা এমন বড় কেনাকাটা করার ক্ষমতা রাখেন। সুতরাং, দামবৃদ্ধি তাদের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago