মাসের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে
আমদানি হ্রাস ও আন্তর্জাতিক বাজারে দামবৃদ্ধির কারণে দেশের খুচরা বাজারে আটার দাম আবারও বেড়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুই বাজারে খোলা আটার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এর দাম ছিল ৫০ টাকা।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২ কেজি আটার প্যাকেটের মূল্য গতকাল ছিল ১২৫ টাকা, যা আগে ছিল ১১৫ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে খোলা আটার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দাম এখন ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের ম্যানেজার মোহাম্মদ বাবলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে আটার দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।'
মিরপুরের পল্লবী এক্সটেনশন এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার জানান, তারা দুই কেজির আটার প্যাকেট ১২৫ থেকে ১২৭ টাকায় বিক্রি করছেন, যেখানে ৪ থেকে ৫ দিন আগে এর দাম ছিল ১১৫ টাকা।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার কয়েকটি বাজারের খুচরা বিক্রেতারা একই কথা জানিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, গতকাল ভারতীয় গম প্রতি মণ (প্রায় ৩৭ কিলোগ্রাম) ১ হাজার ৯১০ টাকা ও কানাডিয়ান গম ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় ধরনের গমের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের আজাদ ট্রেডিংয়ের মালিক আজাদ আলামিন।
"... রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই গমের দাম বাড়ছে। যুদ্ধের আগে ভারতীয় গমের দাম ছিল ৯০০ টাকা এবং রাশিয়া, ইউক্রেন ও কানাডার গমের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা।'
তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়া বেরিয়ে আসার পর গত দুই দিনে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।'
রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের (ইউএন) মধ্যস্থতায় শস্য চুক্তির অধীনে জাতিসংঘ, তুর্কি, রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র শস্যবাহী জাহাজগুলোর চলাচলে সম্মত হয় এবং জাহাজগুলো পরিদর্শন করে।
রাশিয়া-সংযুক্ত ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় মস্কো শনিবার কৃষ্ণ সাগর চুক্তি থেকে সরে আসে। রাশিয়া এ চুক্তি থেকে সরে আসায় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহের জন্য থাকা হাজারো টন গম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইউরোপে ইউক্রেনীয় ভুট্টা রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, কৃষ্ণ সাগর রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে আসায় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন কারণে গত ৬ মাসে গম আমদানি কমে গেছে এবং এখন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণপত্র খোলার বিষয়টি জটিল হয়ে যাওয়া এবং ডলারের দামের অস্থিরতা গমের খুচরা দামের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।'
'আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে, সেজন্য স্থানীয় বাজারেও আটার দাম বাড়ছে', বলেন তিনি।
তিনি জানান, গতকাল তারা প্রতি টন ৪০০ ডলার দরে রাশিয়ান গম কিনেছেন। যেখানে মাত্র কয়েক দিন আগেও তা ছিল ৩৭০ থেকে ৩৮০ ডলার।
রাশিয়া শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে আসায় আগামী দিনে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেও জানান তসলিম শাহরিয়ার।
বাংলাদেশ বাণিজ্য ও শুল্ক কমিশনের (বিটিটিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ ৩৩ লাখ ৪ হাজার টন গম আমদানি করেছে।
২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় গম আমদানি ১০ লাখ ১১ হাজার টন কমেছে। ফলে আটা ও চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশের চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি, বর্তমান মজুত ও পাইপলাইনে কী কী আছে, তা নিয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিটিটিসি।
দেশের বার্ষিক গমের চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন, যার ৮৫ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয় বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
Comments