জাহাজ কমিয়ে জট কমানোর চেষ্টা বন্দরের

ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে—প্রশ্ন শিপিং এজেন্ট সভাপতির

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ফটো

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে বার্থেও জট থাকার পাশাপাশি ইয়ার্ডে কনটেইনার বেড়ে যাওয়ায় বহির্নোঙরে জাহাজগুলোকে ১১ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কনটেইনারগুলো নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ইয়ার্ডে থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

শিপিং এজেন্টরা চলমান সংকটের জন্য একের পর এক বাধার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, গত মাসে ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটি, রাজস্ব কর্মকর্তাদের দেশব্যাপী ধর্মঘট, কয়েক সপ্তাহ কাস্টমস সার্ভার বিঘ্নিত হওয়া ও প্রাইম মুভার অপারেটরদের বারবার কর্মবিরতির ফলে কনটেইনার জট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।

তারা পণ্য পরিবহনে গ্যান্ট্রি ক্রেনের ঘনঘন ত্রুটির কথাও বলছেন। এছাড়া, আছে ট্রেলার ঘাটতি ও ইয়ার্ডের সীমিত জায়গা। এগুলো পণ্য খালাসের সময়ও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) আগের তুলনায় সম্প্রতি বন্দরে চলাচলের জন্য অনুমোদিত কনটেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে বলে, তারা এখন জট কমাতে জাহাজের সংখ্যা কমানোর কথা ভাবছে।

শিপিং এজেন্টরা এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের যুক্তি—অনুমোদিত জাহাজের বর্তমান সংখ্যা কমানো হলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গত বুধবার পর্যন্ত ২১টি জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা করছিল। এর বেশিরভাগই চার থেকে ১১ দিন অলস বসে ছিল। চলতি বছরের শুরুতে জাহাজের গড় অপেক্ষা ছিল এক থেকে দুই দিন। এক সঙ্গে আটটির বেশি জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা করে না।

বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত বন্দরের মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ৪১ হাজার ১২৮ টিইইউএস (২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট) কনটেইনার। সেখানে কনটেইনার রাখা যায় ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস।

এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৯৬৬ টিইইউএস আমদানি কনটেইনারের জন্য নির্ধারিত জায়গা দখল করে আছে। এটি ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতার ৭৭ শতাংশের বেশি।

ইয়ার্ডে কনটেইনার জট জেটিতে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে। নোঙরে জাহাজের দীর্ঘ সারি তৈরি করছে।

বার্থ অপারেটররা বলছেন, দক্ষভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও বন্দর পরিচালনা মসৃণভাবে করার জন্য ইয়ার্ডে কনটেইনার দখল ৬০ শতাংশের নিচে রাখা উচিত।

গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত জাহাজের সংখ্যা অন্তত ১৫-তে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে এসব জাহাজের তালিকা ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিতেও বলা হয়।

সমিতি সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার সমিতির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দর কর্তৃপক্ষের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি বছরের শুরুতে ৯৬টি জাহাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তখন অপেক্ষার সময় ও অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যাও কম ছিল।

'কিন্তু পরে বিভিন্ন কারণে অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও জাহাজ নোঙরের অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে সংখ্যা বেড়ে হয় ১১৮। এটি জট সৃষ্টি করেছে। নোঙ্গরের সময় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।'

সম্প্রতি সিপিএ চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে জাহাজ চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়ার আগে এক মাস পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, 'তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শেষ পর্যন্ত দেশের বাজারে প্রান্তিক ক্রেতাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।'

তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, রপ্তানি কনটেইনারের জন্য চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রি-স্ট্যাকিং সুবিধার ব্যবস্থা করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এটি কনটেইনার উঠানামার সংখ্যা বাড়াবে। জাহাজের দেরি হওয়া বা জাহাজীকরণ বাতিল হওয়া এড়াতে সহায়তা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন রাখেন, 'মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে?'

Comments