চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার, কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে নতুন রেকর্ড
বছর শেষ হওয়ার আগেই কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
বৈশ্বিক পর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বছর দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ছিল ধীরগতি।
যার প্রভাব দেখা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরেও। তবে এই বছর কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এটি দেশের বহির্বাণিজ্যে স্থবিরতা কাটানোর লক্ষণ।
চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় গতকাল পর্যন্ত মোট ৩২ লাখ ৫৮ হাজার টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ) কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে কর্তৃপক্ষ, যা গত বছরের চেয়ে ছয় দশমিক আট শতাংশ বেশি। গত বছর মোট পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ লাখ টিইইউএস।
এর আগে ২০২১ সালে গড়া সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩২ দশমিক ১৫ লাখ টিইইউএসের চেয়ে প্রায় ৪৪ হাজার টিইইউএস বেশি।
বছরের শেষ দুই দিনে আরও প্রায় ১৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হতে পারে বলে আশা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
সর্বমোট ৩২ দশমিক ৫৮ লাখ টিইইউএস কনটেইনারের মধ্যে আমদানি ১৭ দশমিক ৬২ লাখ টিইইউএস এবং বাকি ১৪ দশমিক ৯৭ লাখ টিইইউএস রপ্তানি কনটেইনার।
প্রসঙ্গত, পণ্যবাহী ও খালি উভয় ধরনের কনটেইনার হিসাব করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। বন্দরের জেটি, ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও আইসিটিতে আসা-যাওয়া কনটেইনারের সংখ্যা যোগ করে এই পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয়।
মোট এই ৩২ দশমিক ৫৮ লাখ টিইইউএস কনটেইনারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রায় সাত লাখ টিইইউএস ছিল খালি কনটেইনার। প্রতি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন ট্রান্স শিপমেন্ট বন্দরে পাঠানো হয় প্রায় ৬০ হাজার টিইইউএস খালি কনটেইনার। আমদানি পণ্য বের করে নেওয়ার পর কনটেইনারগুলো খালি হয়।
এদিকে, ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ১২ কোটি ৩১ লাখ টন পণ্য হ্যান্ডেল করেছে, যেখানে কনটেইনারবাহী পণ্যের হিসাবও রয়েছে।
এক বছরে পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের এটিও সর্বোচ্চ রেকর্ড, যা এর মধ্যেই গত বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ১২ দশমিক ০২ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে এবং দুই দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এই রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং সম্ভব হয়েছে কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা বেড়েছে। পাশাপাশি এটি দেশের বহির্বাণিজ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি আশা করেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই প্রবৃদ্ধির কারণে আগামী বছর বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ততম কনটেইনার বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও এগিয়ে যাবে। সর্বশেষ তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, গত জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে যে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়েছিল, তা বন্দর ব্যবহারকারী এবং কর্মকর্তাদের সার্বিক সমন্বয়ে দ্রুত কেটে যায়। এতে করে পরবর্তী মাসগুলোতে অধিক পরিমাণে কনটিনেন্ট হ্যান্ডেলিং করতে বন্দরের বেগ পেতে হয়নি।
পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বেড়েছে, যার ফলাফল চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে পড়েছে, বলেন এই শিপিং ব্যবসায়ী।
Comments