আমদানি কম, প্রায়ই জাহাজ-শূন্য থাকছে চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় গত নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে কমেছে কনটেইনার জাহাজ আসা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশিরভাগ দিন জাহাজ-শূন্য থাকছে বন্দরের বেশ কয়েকটি জেটি। বহিঃনোঙ্গরেও নেই অপেক্ষমাণ জাহাজের সারি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ১৮ জেটির মধ্যে ১২টি নির্ধারিত আছে কনটেইনার জাহাজের জন্য। বাকিগুলোয় ভিড়ে বাল্ক বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজ।

বন্দর কর্মকর্তা ও ব্যবহারকারীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জাহাজগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড়তে পারছে জেটিতে।

গত জুলাই ও আগস্টে ছিল বিপরীত চিত্র। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য কারণে তখন জাহাজগুলোকে জেটি পেতে পাঁচ থেকে সাত দিন অপেক্ষা করতে হতো।

বন্দরের প্রতিদিনের বার্থিং প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১২ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বরে বেশিরভাগ দিন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জেটি জাহাজ শূন্য থেকেছে। পরের এক সপ্তাহ খালি জেটির সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত ২৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ সাত কনটেইনার জেটিতে জাহাজ ছিল না।

আগের মাসের তুলনায় গত মাসে বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা কমেছে। অক্টোবরে এসেছিল ৩৩৭ জাহাজ। নভেম্বরে ১২ জাহাজ কম এসেছে। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজ নভেম্বরে এসেছে ১০৩টি। অক্টোবরে এসেছিল ১০৯টি।

বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা কম ও ডলার সংকটে এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় গত মাসে পণ্য আমদানি কম হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এসেছে মোট এক লাখ ১৩ হাজার ৪৮০ টিইইউএস। গত এপ্রিল থেকে আট মাসে সর্বনিম্ন। মে মাসে তা ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ ৩০ হাজার ৪০০ টিইইউএস।

চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কনটেইনার উঠানামার হিসাবে দেখা যায়, নভেম্বরে আমদানি কনটেইনার উঠানামা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৭৫ টিইইউএস। এটি ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি, ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও পানগাঁও আইসিটিতে মোট উঠানামা করা আমদানি কনটেইনারে সংখ্যা। এখানে পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার হিসাব করা হয়।

এই সংখ্যাটিও গত নয় মাসে সবচেয়ে কম।

কনটেইনার জাহাজগুলো সাধারণত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর—যেমন শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর, সিঙ্গাপুর বন্দর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুম পেলেপাস থেকে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ও কিছু খালি কনটেইনার চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। এ ছাড়াও, আমদানি কনটেইনার নিয়ে কিছু জাহাজ আসে চীনের বন্দরগুলো থেকে।

শিপিং এজেন্ট ও ফিডার (কনটেইনার) জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরগামী জাহাজগুলোকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর থেকে আসার সময় গত মাসে প্রায়ই কম কনটেইনার নিয়ে আসতে হয়েছে।

হং জিয়া ২১ জাহাজটির কথা ধরা যেতে পারে। এটি গত ২১ নভেম্বর মালয়েশিয়ার বন্দর ছাড়ে ১১৫ ডিইউএস আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে।

এসওএল প্রমিস জাহাজটি চট্টগ্রাম ও কলম্বো বন্দরের মধ্যে কনটেইনার পরিবহন করে। গত ২৯ তারিখ জাহাজটি কলম্বো থেকে রওনা দেয় ১৭৩ টিইউএস আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে।

জাহাজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জিবিএক্স লজিস্টিকসের হেড অব অপারেশনস মুনতাসির রুবায়াত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাহাজটি সাধারণত ৭০০ থেকে ৮০০ ইইউএস আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে আসে। আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা কম থাকায় কিছু জাহাজ নির্দিষ্ট বন্দর ছাড়াও অন্য বন্দরে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। যাতে পরিচালনা খরচ ও ক্ষতি কমানো যায়।'

এতে করে জাহাজের রাউটিং সময় বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে এসেছে নির্ধারিত সময়ের পরে। ওই সময়ে বন্দরের জেটিগুলো খালি থেকেছে।

কনটেইনার পরিচালনাকারী বিদেশি শিপিং লাইনসের কর্মকর্তারাও এমন তথ্য দিয়েছেন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক মাসে ডলার সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ছোট-মাঝারি আমদানিকারকরা এলসি খুলেছেন কম। ফলে কারখানার কাঁচামাল আমদানি কম হয়েছে।'

তার এ তথ্য সমর্থন করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বন্দর ও জাহাজবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক মাসে ঢাকায় পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিক আন্দোলনের কারণে অস্থিরতা ছিল। বিদেশ থেকে কার্যাদেশও কম এসেছে। ফলে কাঁচামাল আমদানি কমেছে।'

তবে বছরের এই সময়টায় আমদানি কম থাকে বলে এই চিত্রকে স্বাভাবিক মনে করছেন বিজিএমইএর এই নেতা। তিনি আশা করেছেন আগামীতে ব্যবসা গতি পেলে আমদানিও বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

Fuel to Air India jet engines cut off moments before crash: probe

The Dreamliner was headed from Ahmedabad to London when it crashed, killing all but one of the 242 people on board as well as 19 people on the ground

2h ago