চট্টগ্রাম বন্দর

গত অর্থবছরে যে ২৫ পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে

Chittagong Port
চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ফটো

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল ২৫টি পণ্যের দখলে। এই ২৫টি পণ্যের বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, নির্মাণ সমগ্রী এবং অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল।

গত অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৪ দশমিক ৬২ লাখ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৮৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি করা ৪ হাজার ৭৮৮ ধরনের পণ্যের মধ্যে মাত্র ২৫টি পণ্যের জন্য ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে আছে- তুলা, ডিজেল, স্ক্র্যাপ জাহাজ, ফার্নেস অয়েল, পাম অয়েল, সিমেন্ট ক্লিংকার, গম, অপরিশোধিত তেল, সার, সয়াবিন, হট রোল্ড ইস্পাত, মসুর ডাল, লোহা ও ইস্পাত কাঠামো, ভাঙা পাথর এবং মটর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আমদানির সিংহভাগ এসব পণ্য হলেও, এগুলোর ওপর নির্ভরতা কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এগুলোর বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় পণ্য।

তিনি বলেন, 'দেশের গমের চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো যায়। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে প্রথমে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমদানির তালিকা থেকে দেখা যায়- এগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গম ও সয়াবিনের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। আবার পেট্রোলিয়াম ও সার দেশের শিল্প ও কৃষি উত্পাদনের জন্য দরকারি।

মোয়াজ্জেম বলেন, 'রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ শিল্পে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে প্রচুর পরিমাণে পণ্য আমদানি করা হয়। আমদানির তথ্য থেকে এটাও জানা যায়, প্রাকৃতিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ মজুত কমার কারণে সারের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।'

তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক সেচের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

গত অর্থবছরে শীর্ষ ২৫টি আমদানি পণ্যের মধ্যে ১৪টি থেকে সরকারের ২১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, বাকি ১১টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বা রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হওয়ায় শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে।

এছাড়া, এ ধরনের পণ্য আমদানি আগের অর্থবছরের ৬২ মিলিয়ন টনের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন বা ৩৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বেড়েছে।

আর ২০২১-২২ অর্থবছরে সামগ্রিক আমদানি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ০৭ লাখ কোটি টাকা মূল্যের ৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন।

অর্থ্যাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় আমদানি কমলেও ব্যায় বেড়েছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা।

প্রকৃতপক্ষে আমদানির পরিমাণে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও চলমান ডলার সংকট ও বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মোট আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমদানি ব্যয়ের বেশিরভাগ জ্বালানি, ভোজ্যতেল, নির্মাণ সামগ্রী ও রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের পেছনে ব্যয় হয়।

কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, মোট আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৪০ হাজার ৮২ কোটি টাকা তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে, যা পোশাক শিল্পের মূল কাঁচামাল হিসেবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। আমদানি ব্যয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ও অপরিশোধিত তেল।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৯ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন টন এই তিন জ্বালানি আমদানি করা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা মূল্যের ৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন টন।

এদিকে গত অর্থবছরে ২৬ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের ৫ দশমিক ১৯ মিলিয়ন টন ব্যবহৃত ও স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয়েছিল, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ দশমিক ৮১ মিলিয়ন টন।

একই সময়ে ৩৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা মূল্যের ৩ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন টন পাম, সয়াবিন ও সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩১ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ৩ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন টন।

এছাড়া ১২ লাখ টন সার আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, ১৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন সিমেন্ট ক্লিংকারে ১১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা এবং ২৫ লাখ টন গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।

একই সময়ে ৪২ লাখ টন কয়লার জন্য ৬ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা, ৭ লাখ টন হট রোল্ড স্টিলের জন্য ৪ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা, ৪ দশমিক ৯৬ লাখ টন টন মসুর ডালের জন্য ৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা এবং ১২ মিলিয়ন টন পাথরের জন্য ২ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান বলেন, দেশের চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে এসব পণ্য প্রতিবছর শীর্ষ আমদানির তালিকায় থাকে। এছাড়া, রপ্তানিমুখী এবং দেশীয় শিল্পের জন্য খাদ্যপণ্য ও কাঁচামালও আমদানি তালিকার শীর্ষে আছে।

তিনি আরও বলেন, 'এক্ষেত্রে গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এসব পণ্য দ্রুত ছাড়ার পাশাপাশি প্রকৃত দামে মূল্যায়নের ওপর জোর দিচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

CA accords reception to SAFF winning women's team, asks for written demands

During a reception ceremony at the State Guest House Jamuna in the morning today, Chief Adviser Professor Muhammad Yunus asked the players of the Bangladesh team that won the 2024 SAFF Women’s Championship in Nepal last week to submit a list of their demands in writing, assuring them of working on those in the coming days.

1h ago