৩ বছর মন্দার পর দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে

মূলত দাম স্থিতিশীল থাকা, নিবন্ধন খরচ কম ও মোটরসাইকেল নির্মাতাদের আকর্ষণীয় বিপণনের কারণে প্রায় তিন বছরের ধীরগতির পর দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি একটু একটু করে বাড়ছে।
স্থানীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলছে—গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাদের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। লোয়ার-সিসির (কিউবিক ক্যাপাসিটির) মোটরসাইকেলের তুলনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মডেলের চাহিদা বেশি। এসবের দাম দুই লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন—এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার মোটরসাইকেল কম ও মধ্যম আয়ের অনেক ক্রেতার পক্ষে কেনা সম্ভব না বলে এগুলোর বিক্রি কমেছে।
তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট দুই লাখ ৫৭ হাজার ৬৩২ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৩৩০টি।
দেশের বাজারে ভারতীয় বাজাজ এবং জাপানি ইয়ামাহা ও সুজুকি ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে।
ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত রঞ্জন দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রেতারা দূরে ভ্রমণের জন্য ভালো দামের মোটরসাইকেল পছন্দ করায় গত ছয় মাস ধরে এই ধরনের মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে।'
জনপ্রিয় ইয়ামাহা মডেলগুলোর মধ্যে আছে—আর ফিফটিন সিরিজ, এমটি-ফিফটিন ভিথ্রি, এমটি-ফিফটিন ভি ওয়ান, এফজেড-এস ভিথ্রি, এফজেড-এস ভিফোর, ও এফজেড-এস। এসব মোটরসাইকেলের দাম দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা।
দেশে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে ভ্রমণের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, শহর ও মফস্বল এলাকায়। রাজধানীর বাইরে রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে ক্রেতাদের আরও টেকসই ও উচ্চ-ক্ষমতার মোটরসাইকেল কিনতে হচ্ছে।
সুব্রত রঞ্জন দাস আরও বলেন, 'ঢাকার বাইরে রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। সেখানে ছোট মোটরসাইকেলের তুলনায় ১৬০ সিসির ভারী ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল বেশি ব্যবহারযোগ্য।'
এদিকে, ১০০ সিসি থেকে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। বেশি দামের কারণে অনেক ক্রেতা সতর্ক।
'অনেকে দাম কমার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু, এখন তারা বুঝতে পেরেছেন যে দাম খুব একটা কমবে না। তাই ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে।'
জাপানি ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য থাকলেও বাজারে ভারতীয় বাজাজও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শীর্ষ তিনের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়েছে। বিশেষ করে, কম দামের মোটরসাইকেলের মুনাফা কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে—আংশিক হলেও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ডার কমে যাওয়ায় এই বছর নতুন মডেলের মোটরসাইকেল বাজারে কম আনা হয়েছে। একই সঙ্গে শোরুমে কম থাকায় অনেক ক্রেতা বুকিং দিয়ে রাখছেন।
সুব্রত রঞ্জন দাস মনে করেন, মুনাফা কমে যাওয়ায় মোটরসাইকেলের বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। দামি মোটরসাইকেল বেশি বিক্রি হলেও ১০০ থেকে ১২০ সিসি মোটরসাইকেল বিক্রি কম।
টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব কুমার রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ছয় মাসে দেশে মোটরসাইকেলের বাজার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।'
'আগে প্রতি মাসে প্রায় ২৪ হাজার ২৫টি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৩২০টি। অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। প্রতি মাসেই বিক্রি বাড়ছে।'
টিভিএস'র জনপ্রিয় হাই সিসি মডেলগুলোর মধ্যে আছে অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ফোরভি ফাই, অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ফোরভি ও অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ টুভি।
বিপ্লব কুমার রায় জানান, সম্প্রতি বিক্রি বাড়লেও কম দামের মোটরসাইকেল বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকটের পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে।
তার মতে, 'প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকে মোটরসাইকেলের কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। এখন তারা আর অপেক্ষা করছেন না।'
টিভিএস সম্পর্কে তিনি জানান, সম্প্রতি প্রতি মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি প্রায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার হয়েছে। 'বিক্রয় প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মুহাম্মদ আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, সম্প্রতি হোন্ডার বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণ এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা।
বেশি দামের জনপ্রিয় হোন্ডা মডেলগুলোর মধ্যে আছে এক্সব্লেড, এসপি১৬০ ও হর্নেট ২.০।
'আমরা পিজিএম-এফআই ইঞ্জিন, ডিজিটাল মিটার ও উন্নত জ্বালানি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এগুলো আমাদের মোটরসাইকেলকে আরও স্মার্ট ও সাশ্রয়ী করে তুলবে।'
এসব সুবিধা হোন্ডার মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।
Comments