জুলাই-অক্টোবরে চামড়ার জুতা রপ্তানি ৫ বছরে সর্বোচ্চ

চামড়ার জুতা
প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে বাংলাদেশের চামড়ার জুতার রপ্তানি বাড়ছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে দেশের চামড়ার জুতা রপ্তানি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেশি করে চামড়ার জুতা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ।

কয়েকটি দেশে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও রপ্তানিকারকরা বলছেন, এ দেশে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় বলে বিদেশিরা এখান থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী। এটি দেশের চামড়ার জুতাকে আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।

এ ছাড়াও, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীন থেকে কিছু কার্যাদেশ বাংলাদেশে চলে আসছে।

গত জুলাই থেকে অক্টোবরে তৈরি পোশাকের পর চামড়ার জুতা প্রস্তুতকারকরা ২২৮ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। এটি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, আগের বছরের একই সময়ে চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৮২ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার। এক বছরে তা বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি।

করোনা মহামারির সময় ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে জুতা রপ্তানি হয়েছিল ১৬৮ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার।

জুতা উৎপাদক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেনিস সুজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহামারির পর দীর্ঘ মন্দা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে নতুন অর্ডার আসায় চামড়ার জুতা রপ্তানি মহামারির আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।'

'অন্তর্বর্তী সরকার প্রতি বছর অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং ও সার্টিফিকেশনের মতো রপ্তানি ইস্যু দূর করলে চামড়ার জুতা রপ্তানির এই ক্রমবর্ধমান ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার যদি জুতা প্রস্তুতকারকদের সহযোগিতা করে এবং বন্ডেড সুবিধায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমায় তবে জুতা রপ্তানি বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।'

তার মতে, 'এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।'

নাসির খান মনে করেন, দেশি জুতা খাতে ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন সম্ভব। তাই রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।

এ ছাড়াও, অর্থনীতি সচল হতে শুরু করায় বিদেশি ক্রেতারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশে ফিরছেন।

আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রত্যয় পারভেজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চীনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে কিছু কার্যাদেশ দেশে চলে আসছে।'

তার মতে, চীন ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক দামে চামড়ার জুতা বিক্রি করতে পারে বলে রপ্তানি বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'ইউরোজোন, উত্তর আমেরিকা ও জাপানের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের চামড়ার জুতা প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় আগামী বছর রপ্তানি আরও বাড়বে।'

তার মতে, যেসব বিদেশি ক্রেতা আগে চীন থেকে পণ্য নিতেন তারা প্রতিযোগিতামূলক দামের সুবিধা নিতে এখন বাংলাদেশে আসছেন।

আকিজ ফুটওয়্যার ব্যবস্থাপক বলেন, 'রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা দরকার হয় না। তবে রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির জন্য ঝামেলামুক্ত কাস্টমস প্রক্রিয়া দরকার।'

দেশের শীর্ষ চামড়ার জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে বেশি অর্ডার এসেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি পণ্যের গুণমান সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।'

'ইউরোজোনের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থাকায় জুতা রপ্তানি বাড়বে।'

'রপ্তানি বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চান না। তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেন।'

অ্যাপেক্স অ্যাডেলচি ফুটওয়্যার, জেনিস সুজ ও বে ফুটওয়্যারসহ প্রায় ৬০টি দেশি প্রতিষ্ঠান মূলত জাপান, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে।

জার্মানির অনলাইন পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্তার তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জুতার বাজার তিন দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এ বাজার বার্ষিক পাঁচ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

Comments