ডিমের দাম কমায় বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা

ডিম, ডিম আমদানি, ডিমের দাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশে ডিমের দাম,
একটি ট্রাকে ডিম বোঝাই করছেন শ্রমিকরা। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

এক মাসের ব্যবধানে খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা কমে যাওয়ায় লোকসান গুনছেন পোল্ট্রি খামারিরা। একইসঙ্গে তাদের ব্যবসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খামারিদের অভিযোগ, গত ৮ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর ডিমের দাম কমে যায়। দেশের বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে ও দা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

সাভার ও ধামরাইয়ের প্রায় এক ডজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ডিম প্রতি ৫০ পয়সা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।

ধামরাইয়ের মাখুলিয়া এলাকার ডিম চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'এক মাস আগে ১০০ পিস সাদা ডিম পাইকারদের কাছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন ১০০ পিস সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে আমরা লোকসানের ‍মুখে পড়েছি।'

তবে পোল্ট্রি ফিড, ওষুধ ও ছানার দাম নিয়ন্ত্রণ ও কমাতে সরকারের সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানাবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'সরকার যদি এটি করতে পারে, তাহলে আমরা কম দামে বিক্রি করেও লাভ করতে পাবর।'

এই খাতে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে আনোয়ার হোসেনের। তার খামারে তিন হাজার ৩০০ লেয়ার আছে এবং প্রতিদিন প্রায় তিনি হাজার উৎপাদন করেন।

আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, 'ডিমের দাম না বাড়লে কয়েক মাসের মধ্যে আমাকে আমার খামার বন্ধ করে দিতে হবে।'

ধামরাইয়ের বড়চন্দ্রাইল এলাকার ডিম খামারি আমিনুর রহমানের খামারে ২ হাজার ৭০০টি ডিম উৎপাদনকারী মুরগি আছে। তিনি জানান, ডিমের দাম দিন দিন কমছে।

তিনি বলেন, 'আমি কিভাবে আমার খামার চালাব? একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় আট থেকে সাড়ে আট টাকা এবং ডিম বিক্রি করতে হয় সাত টাকা ২০ পয়সা থেকে সাত টাকা ৫০ পয়সায়। এক মাস আগেও আমরা ভালো অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু এখন লোকসান গুনছি।'

সাভারের ভাকুর্তা এলাকার ডিম খামারি আব্দুর রহমান জানান, তিনি এই খাতের সম্ভাবনা দেখে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু এখন দেখছেন দিন দিন তার লোকসান বাড়ছে।

পাবনার ডিম খামারি মোহাম্মদ বরকত আলী মিয়া জানান, এক মাস আগে প্রতিটি ডিম ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন মাত্র আট থেকে নয় টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি দাবি করেন, বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে ১০ টাকা ৫০ পয়সা খরচ হয়।

তিনি বলেন, 'ব্যবসায় টিকে থাকতে আমি এখন লোকসানে ডিম বিক্রি করছি এবং আগামীতে লাভের আশা করছি। লাভ-লোকসান ব্যবসারই একটি অংশ।'

'ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার দিন থেকেই দাম কমতে শুরু করে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়া শুরু করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেক খামারি কম দামে বিক্রি করছেন।

দিনাজপুরের পোল্ট্রি খামারিরা ডিমের বাজার দর কমায় একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা এখন ডিম বিক্রি করছেন প্রায় আট টাকা ৬০ পয়সা দরে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার খামারি ইমতিয়াজ কাওসার হঠাৎ করে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান বাজার দর মুনাফার অনেক নিচে নেমে গেছে, তিনি প্রতিটি ডিম প্রায় ১১ টাকা বিক্রি করছেন।

তিনি খামারিদের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, উচ্চ উত্পাদন ব্যয় তাদের জন্য ব্যবসায়ের ব্যয় বহন করা ও লাভ করা কঠিন করে তুলেছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বাগমারা এলাকার খামারি সহদেব কুমার মাহতো জানান, এক মাস আগেও প্রতিটি ডিমের পাইকারি দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু এখন প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে।

বিশেষজ্ঞরা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের দাম স্থিতিশীল করতে ও খামারিরা যেন ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করতে পারে সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফতাবুজ্জামান বলেন, একজন খামারির ডিম উৎপাদনে যদি ১০ টাকা ২৫ পয়সা খরচ হয়, তাহলে তাকে ন্যায্য দাম পেতে হবে, না হলে তিনি ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না।

তিনি জানান, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিম ১০ থেকে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি সর্বোচ্চ পরিসরেও কৃষকদের মুনাফার জন্য লড়াই করতে হবে, কারণ পাইকার এবং মধ্যস্বত্বভোগীরাও কাটছাঁট করবে।

তিনি আরও বলেন, আমদানি শুরুর পর থেকে দামের তীব্র পতন মধ্যস্বত্বভোগীদের ষড়যন্ত্রের দিকটিকেই ইঙ্গিত করে।

'মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফার কারণে সম্প্রতি বাজারে ডিমের দাম অনেক বেড়েছিল। সেটা এখন অনেকটাই প্রমাণিত। তা না হলে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিলে এত হারে দাম কমে যেত না,' যোগ করেন তিনি।

আফতাবুজ্জামান বলেন, 'শেষ পর্যন্ত কৃষকরাই ভুগছেন। বাজার দখল করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।'

তিনি বলেন, 'মধ্যস্বত্বভোগীরা বুঝতে পেরেছিলেন, আমদানি অব্যাহত থাকলে তাদের জন্য ক্ষতিকারক হবে। তাই তারা কম দামে ডিম কিনতে শুরু করেন।'

তিনি আরও বলেন, উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা অকার্যকর ছিল।

খামারিরা বলছেন, দেশে দৈনিক চাহিদা মেটাতে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago